সত্যজিৎ! আমার সত্যজিৎ!

সত্যজিৎ! আমার সত্যজিৎ!

তাকে নিয়ে কিছু কথা বলার একটা ইচ্ছা বহুকাল ধরে ঘুরছে ভেতরে। এখানে বহুকাল মানে সত্যিই বহুকাল, বহুদিন নয়। কিন্তু তাকে নিয়ে বলার মত কথা এত বেশি জমে আছে যে কিভাবে শুরু করব সেটাই ফান্ডামেন্টাল সমস্যা। ছবিতে যে সুন্দর ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে তিনিই আমাদের প্রিয় সত্যজিৎ। ছোটবেলা থেকেই মাল ছিল।

মনে মনে সত্যজিৎ রায়কে মানিকদা বলে ডাকি আমি। এই ডাকটার শুরু সেই ক্লাস নাইন থেকে। তখন ইন্টারনেটের যুগ আসেনি।ডিভিডি প্লেয়ারের যুগ চলছিল। আমরা মুভি পাগলরা তখন টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ডিভিডির ডিস্ক কিনে আনতাম।আমার খুব ভালো মনে আছে, সত্যজিৎ রায়ের ৩০ সিনেমার সেই ডিভিডি বক্সটা কেনার জন্য টানা দুই মাস টিফিনে কিছু খাইনি আমি।এই ৩০টা সিনেমা দেখার পর থেকেই সম্ভবত ‘প্রিয় সত্যজিৎ রায়’ হয়ে উঠলেন ‘আমার মানিকদা’। সেই খেকে নিজে দুয়েকটা সিনেমা বানানোর একটা সুপ্ত বাসনা খুবই গুপ্তভাবে মনের মধ্যে কঠিন যন্ত্রনা দিয়ে চলেছে।(হাসি পেল কি? হাসি পেলেও কিছু করার নাই। মনের আশাগুলো মুখে আনলে হাস্যকরই শোনাবে!)

মানিকদার কথা আসলে ফেলুদার কথা আসবে না, সেটা কিভাবে সম্ভব! ডিটেকটিভ বইয়ের দুনিয়ায় ফেলু মিত্তিরের চেয়ে অনেক ভালো গোয়েন্দার আছে আমি জানি। কিন্তু ফেলু মিত্তির যে পজিটিভ এনার্জি পাঠকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়, সেটা কি আর কোনো গোয়েন্দা পারে? যখন শার্লক হোমস পড়ি তখন মনে হয়, ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে সিগারেট টানতে টানতে মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করার মধ্যেই দুনিয়ার সকল শান্তি নিহিত। জেমস বন্ড পড়ার সময় মনে হয়, নারী আর গাড়ি ছাড়া আর কি আছে জীবনে? শুধু ফেলুদার কাছে আসলেই মনে হয়, বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র। তাই যখনই একটু ডাউন হয়ে যাই, ফেলুদার কাছে চলে আসি।ফেলুদা মাসখানেক ফুল-অন থাকার ফুয়েল দিয়ে দেয়।

ফেলুদা নিয়ে মাতামাতি হয় অনেক, কিন্তু প্রোফেসর শঙ্কুকে নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ কিছুদিন আগেও দেখা যেত না।এখনও যে খুব বেশি দেখা যায় তাও বলতে চাই না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি সত্যজিতের দুই সৃষ্টির মধ্যে শঙ্কুকেই এগিয়ে রাখব। লেখকের কল্পনাশক্তির এই অসাধারন ব্যবহারের প্রশংসা কিভাবে করতে হয় জানি না। এখানে সবচেয়ে বড় কথা যেটা সেটা হল, সত্যজিৎ জানতেন কল্পনায় কতটুকু রঙ চড়ালে তা স্বপ্নময় হয়ে ওঠে। বেশিরভাগই কল্পনায় রঙ চড়াতে চড়াতে কল্পনাটাকেই ফ্যাকাশে বানিয়ে ফেলে। ঠিক এই জায়গাটাতেই সম্ভবত সত্যজিৎ তার সময়কেও ছাড়িয়ে গেছেন।

সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে, তাড়িনীখুড়োর জন্য। গল্পবলিয়ে এই বুড়োকে নিয়ে সত্যজিৎ খুব বেশি লেখেননি। কিন্তু উদ্ভট গালগপ্প দিয়েও যে মানুষকে পুরোপুরি মাতিয়ে রাখা যায় তার অনেক বড় প্রমান তাড়িনী চরণ বাড়ুজ্যে।

অনেক লিখে ফেললাম, বাস থেকে নামার সময় হয়ে যাচ্ছে।(এতক্ষণ জ্যামে বসে ছিলাম!)কিন্তু এত লিখেও অনেক প্রসঙ্গে আসাই হল না। যেমন: সত্যজিতের অাকাআকির ব্যাপারটা। এনিয়ে অন্য কোনদিন কথা হবে।

Author: Moheul I Mithu

মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। তার পাঠকপ্রিয় অনুবাদ গুলোর মধ্যে রয়েছে: দি হবিট, দি লর্ড অফ দ্য রিংস, পার্সি জ্যাকসন, হার্ড চয়েসেজ, দি আইস ড্রাগন, লিজিয়ন, প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে, দি আইভরি চাইল্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বিশ্বখ্যাত ২০টির বেশি বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল। (লিখেছেন: লে: কর্নেল রাশেদুজ্জামান)

Share This Post On

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link
Powered by Social Snap