ক্রেডিট কার্ড না চেঞ্জ করে পারলাম না

শেষ পর্যন্ত আমার বহুদিনের অ্যামেক্স কার্ডটা ফেরত দিতেই হল। যদিও ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু বাধ্য হলাম আর কি। এই লেখাটাকে আমার সিটি ব্যাংক থেকে ইস্যু করা আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড টানা চার বছর ব্যবহার করার রিভিউ বলা যেতে পারে। শুরুতে অ্যামেক্সে আর সিটি ব্যাংকের ভালো দিকগুলো দিয়েই শুরু করব। কারণ আমার অভিজ্ঞতা ভালো।
সিটি টাচ অ্যাপের সাথে কার্ড ব্যবহার করা বেশ আরামদায়ক। যে কোনো সময় অ্যাপ থেকে বিল দিয়ে দেয়া যায়, এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট আপডেট হয়ে যায়। এই কনভেনিয়েন্সটা আমার খুবই ভালো লাগত।
রিওয়ার্ডস পয়েন্ট ব্যবহার করার কারণে কখনই আমাকে ক্রেডিট কার্ডের ফি দিতে হয়নি। পয়েন্ট দিয়েই সব ধরনের ফি দিয়ে দিতে পারতাম। কখনও কোনো বিল দেখিনি যেটা আমি আগে থেকে জানতাম না। অবশ্য ব্যবহারকারী হিসেবে আমি সচেতন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না হওয়ার সেটাও একটা কারণ। আমি সবসময় কার্ডের বিল প্রতিমাসেই পুরো শোধ করে দিতাম। তাই ক্রেডিট লিমিট কম হওয়ার পরেও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।

আরেকটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, অনেক ক্রেডিট কার্ডের বিল জেনারেট হয় মাসের ২৫ তারিখে। ফলে পরের মাসে ১০ তারিখের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু সিটি ব্যাংকের অ্যামেক্স কার্ডে বিল জেনারেট হয় মাসের ২৮ তারিখে। ফলে পরের মাসে ১২/১৩ তারিখ পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নতুন মাসে ২-৩ দিন বেশি সময় পাওয়াটা নিঃসন্দেহে কাস্টমার ওরিয়েন্টেড চিন্তাভাবনার ফসল। সিটি ব্যাংকের এরকম কিছু ছোট ছোট ব্যাপার আমার ভালো লাগে।

এত ভালোই যখন লাগে, তখন ফেরত দিলাম কেন? মূল কারণ দুইটা।
এক, যদিও অনেকে কোনো সমস্যায় পড়ে না। কিন্তু অ্যামেক্সের কার্ড নিতে অনেক রিটেইলার, বিশেষ করে ছোট রিটেইলাররা, অনাগ্রহ দেখায়। এমনকি অনেক সময় তাদের অ্যামেক্সের পজ মেশিন কাজ করে না। এই অভিজ্ঞতা নিয়মিতই হত। সম্ভবত, অ্যামেক্সের কমিশন বেশি হওয়াই এটার প্রধান কারণ। এছাড়া যেসব রিটেইলার এবং অর্গানাইজেশন পজ মেশিনের ফি নেয় সেগুলোতেও চার্জ ১-১.৫% বেশি দিতে হয়। তবে আরামদায়ক অভিজ্ঞতার জন্য, এবং সমস্যায় পড়লে সহজেই অন্য কার্ড ব্যবহার করতে পারতাম বলে, কার্ডটা রাখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়কারণটা এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে আসলো।
দুই, কার্ডটা আমি নিয়েছিলাম এফডি’র বিপরীতে। ছাত্র থাকাকালীন কার্ড নিয়েছিলাম, তাই এফডির বিপরীতে নেয়া ছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। সেই এফডিতে আমি রিটার্ন পাচ্ছি, ৬.৩৫%। আর সিটি ব্যাংকেই এখন ১১% পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। আমি চাইছিলাম, নতুন একটা এফডি করে, কার্ডটা সেই নতুন এফডির সাথে লিয়েন করে পুরানো এফডিটা লিকুইডেট করে ফেলতে, যেহেতু রিটার্ন খুব কম আসছে। আমাকে অনেকে বলেছে এটা খুব সহজ। কিন্তু সিটি ব্যাংকের সাভার ব্রাঞ্চ থেকে আমি এব্যাপারে কোনো সহযোগিতা পাইনি। প্রথমে একজন কর্মকর্তা আমাকে মিরপুরে কার্ড ডিভিশনে যাওয়ার পরামর্শ দিল। তারপর তিনি ট্রান্সফার হওয়ার পর নতুন যিনি এলেন, তিনি জানালেন কার্ডের সিকিউরিটি চেঞ্জ করা সম্ভব না। এরমধ্যে আমি ব্যাংকের লোকজনের আচরণেও বেশ বিরক্ত ছিলাম। কারণ কাস্টমার কেয়ার থেকে জানানো হচ্ছিল, ব্রাঞ্চে গেলেই এটা হয়ে যাবে, কিন্তু ব্রাঞ্চে গিয়ে আমি খুব অসহযোগিতা পাচ্ছিলাম। বেশ অনেকদিন থেকেই খেয়াল করছি, সাভার ব্রাঞ্চে এখন সমস্যা নিয়ে সমাধান পাওয়া বেশ কঠিন।তারা এই টেবিল ওই টেবিল ঘুরায়, সরকারি অফিসের মত। অথচ, আগে দেখতাম, কোনো একটা সমস্যার কথা বললে, কর্মকর্তারা নিজেরা স্বতস্ফূর্তভাবে সমাধান বেশ করে ক্লায়েন্টেকে আরামদায়ক একটা অভিজ্ঞতা দেয়ার চেষ্টা করত।

সবমিলিয়ে মনে হল, আগে এটা বন্ধ করি, নইলে আমার ফিক্সড ডিপোজিট আরও এক বছরের জন্য আটকে যাবে। প্রয়োজন মনে করলে আবার নেয়া যাবে। কিন্তু ব্যবহারের জায়গা প্রতিনিয়ত কমতে থাকায় সেটা আর দরকার হবে বলে মনে হচ্ছে না। আর অ্যামেক্স দরকার হলে, ডেবিট কার্ড যেহেতু আছেই, তাই চলবেই না এরকম অবস্থায় পড়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।

একবার ভেবেছিলাম, সিটি ব্যাংক থেকেই একটা ভিসা ক্রেডিট কার্ড নিই। কিন্তু সেখানে কাগজপত্র দেয়ার পর অভিজ্ঞতা আগের মতই খারাপ। বরং কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে যেটুকুই এফোর্ট দিতে হয়েছে, সেটুকুই লস। (এর আগেও একবার একটা কোম্পানি একাউন্ট খোলার জন্য অনেক কাগজপত্র চাওয়ার পরে, কাগজপত্র যখন জমা দেয়া হল তখন সিটি ব্যাংকের লোকজন পরে জানাবে বলে আর কিছু জানায়নি। নানান অফিস থেকে কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করে ব্যাংকে দিয়ে আসা মিলিয়ে আমার একদিন ব্যয় হয়েছিল। কিন্ত পরে সেই কাগজগুলো আর তারা ফেরতও দেয় না। ফলে অন্য ব্যাংকের সাথে কাজ করার সময় আবার নতুন করে সব কালেক্ট করতে হয়েছিল। যেই কোম্পানির একাউন্ট খোলা নিয়ে এই ঝামেলা তারা করেছিল সেই কোম্পানি থেকে এখন পঞ্চাশ লাখ টাকার স্যালারি যায়। যে ব্যাংকে একাউন্ট করা হয়েছে সেই ব্যাংকে যেতেও হয়না। একটা ফোন দিলেই সব কাজ হয়ে যায়।) পরে পরিচিতি একজন আমাকে মোটামুটি কোনোরকম ঝামেলা না দিয়েই ওয়ান ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিতে চাইলো। আসলেই কোনো প্যারা নিতে হয়নি। আমি সিটি ব্যাংকে একাউন্টও খুলেছিলাম এই ভদ্রলোকের মাধ্যমে। ইনি যতদিন ব্রাঞ্চে ছিলেন ততদিন কোনো কাজে ব্রাঞ্চে গিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরতে হয়নি। এখানেও কোনো সমস্যা ছাড়াই কার্ড করে দিলেন উনি। স্যালারি সার্টিফিকেট এক মাস আগের হওয়ার একটু ইস্যু হয়েছিল সেটাও এই ভদ্রলোক নিজ দায়িত্বে সমাধান করেছেন।

এই তো আমার অ্যামেক্স কার্ড ছাড়ার পেছনের সব কারণ। সিটি ব্যাংক একটা ভালো কোম্পানি বলেই মনে হয় আমার। ক্লায়েন্ট যেন বিরক্ত না হয় সেদিকে যদি এরা এখনই নজর না দেয়, তাহলে একটা ভালো অপশন বাদ পড়ায় খারাপ লাগবে আমার। এখানে উল্লেখ্য, সিটি ব্যাংকের বেশ কয়েকজন গ্রাহক (সবাই আমার পরিচিত) অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই অন্য ব্যাংকে সরে গেলেন।

Author: Moheul I Mithu

মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। তার পাঠকপ্রিয় অনুবাদ গুলোর মধ্যে রয়েছে: দি হবিট, দি লর্ড অফ দ্য রিংস, পার্সি জ্যাকসন, হার্ড চয়েসেজ, দি আইস ড্রাগন, লিজিয়ন, প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে, দি আইভরি চাইল্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বিশ্বখ্যাত ২০টির বেশি বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল। (লিখেছেন: লে: কর্নেল রাশেদুজ্জামান)

Share This Post On

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link
Powered by Social Snap