পাঠক হিসেবে রিডার্স ব্লক হয়েছে, লেখক হিসেবে রাইটার্স ব্লক। কিন্তু কোনোটাই খুব বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে সিনেমা প্রেমী হিসেবে বেশ ভালো রকম ভিউয়ার্স ব্লকে পড়েছি। কোনো সিনেমা বা সিরিজই যেন ভালো লাগছিল না। ‘পিকি বিল্ডার্স’ আর ‘শ্যাডো অ্যান্ড বোনস’ টাইপের সিরিজগুলা অনেকমাস ধরে ডাউনলোক করে রাখলেও এক দুই অ্যাপিসোডের বেশি দেখতে পারিনি। এমন বেনেড্রিক্ট কাম্বারব্যাচের ‘কিউরিয়াস’(২০২১) সিনেমাটাও দেখা হচ্ছে না। অবস্থা এখন এমন, সিনেমা বা সিরিজ দেখার অভ্যাসটাই কমে গেছে। অসাধারণ এই ‘সোল’ মুভিটা দেখতেও আমার তিনবার বসতে হয়েছে।
মুভি শেষ করার পর, এত ভালো অনুভূতি শেষবার হয়েছিল, ‘ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ’(১৯৪৬) মুভিটা দেখার পর। এখন সিনেমার আলাপে আসি।
সিনেমাটা কী নিয়ে:
সিনেমাটা জো গার্ডনারকে নিয়ে। একটা স্কুলের সংগীতের শিক্ষক এই ভদ্রলোক নিজের জীবন নিয়ে খুশি নয়, যেন কিছুই করা হল না এমন একটা গতানুগতিক জীবন। জো ভালোবাসে পিয়ানো বাজাতে। কিন্তু রসকষহীন দুনিয়ায় পিয়ানো বাজিয়ে তো আর স্বচ্ছন্দের জীবন পাওয়া যায়না। তাই জো-এর মা চায়, স্কুলের চাকরিটা পার্মানেন্ট করে নিয়ে জীবনে থিতু হোক ছেলেটা। কিন্তু জো পুরোপুরি চাইতে পারছিল না এমন প্রেডিক্টেবল গতানুগতিক জীবন। একদিন চলে আসল সারা জীবনের পরম আকাঙ্ক্ষিত এক সুযোগ। নিজের সবচেয়ে প্রিয় মিউজিশিয়ানের সাথে পিয়ানো বাজানোর সুযোগ পেয়ে গেল সে। জো ভেবেছিল এবার তার জীবন বদলে যাবে। কিন্তু বিধি বাম। প্রিয় মিউজিয়ানের কাছ থেকে জীবনের সবচেয়ে খুশির সংবাদটা শুনে বাড়ি ফেরার পথেই রোড অ্যাক্সিডেন্ট। জীবনের ওপারে চলে গেল। কিন্তু সে তো এখন মারা যেতে চায় না। তার আকাঙ্ক্ষিত জীবন যেইমাত্র শুরু হতে যাবে ঠিক তখনই সেই জীবন ছাড়তে হবে সেটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না জো। অনেক চেষ্টা করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার চেষ্টা করে। আর সেটা করতে গিয়ে জীবনের সম্পূর্ন ভিন্ন একটা অর্থ আবিষ্কার করে।
আমার বকবকানি:
মাঝে মাঝে কিছু শিল্পকর্ম আমাদের অনুভব করতে শেখায় যে জীবনে সন্তুষ্ট থাকা জরুরি। জীবনের ভালো-খারাপ প্রতিটা মূহুর্ত উপভোগ করা জরুরি। প্রতিটা সম্পর্ককে উৎযাপন করা জরুরি। ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলোতে কৃতজ্ঞ হওয়াটা জরুরি। এই সিনেমাটা এই জানা কথাগুলোকেই আবার অনুভব করায়। বহুদিন পর ডিজনি আর আমার সবচেয়ে প্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সারের কাছ থেকে ভালো একটা মুভি। প্রথমদিকে একটু স্লো মনে হচ্ছিল আমার। কিন্তু একবার ঢুকে যাওয়ার পর আর বের হয়ে আসতে পারিনি। আর শেষ করার পর জীবন নিয়ে কৃতজ্ঞ হতে ইচ্ছা করছে। আমাদের জীবনে কত নিয়ামত, অর্জন আর প্রাপ্তি থাকে। আরও বড় প্রাপ্তির জন্য আমরা এই শত শত ছোট ছোট অর্জন, প্রাপ্তি আর উপহারগুলোকে মূল্যায়ন করতে পারিনা বা করার কথা মনেই আসে না। গত দুই বছরে এটা আমার দেখা বেস্ট মুভি। এমন মুভি বারাবার দেখা যায়। ভালো থাকার জন্য জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত কী অমূল্য এটা অনুভব করা জরুরি। আর আমার সবচেয়ে ফ্যাসিনেটিং লেগেছে, এরকম অদ্ভূত একটা উপায়ে (অন্যকথায় অদ্ভূত একটা কাহিনির মাধ্যমে) এই অনুভূতি দর্শকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়াটা।
প্রচন্ড ইন্সপায়ারিং মুভি। জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শেখাবে অনেক দর্শককে। হাইলি রিকমেন্ডেড।
সিনেমা পরিচিতি:
নাম: সোল (২০২০)
পরিচালক: পিট ডাক্টার
কাহিনি: পিট ডক্টার, মাইক জোনস
স্টারকাস্ট: জিমি ফক্র, টিনা ফে, গ্রাহাম নর্টন, র্যাচেল হাউজ।