বিলবো ব্যাগিন্স বনাম ফ্রোডো ব্যাগিন্স
ক্যারেকটার কম্পেরিজন
শুরুতেই যেটা বলে নেয়া উচিত সেটা হল, বিলবো ব্যাগিন্স মূলত ‘দি হবিট’ বইটির নায়ক, যে বই দিয়েই মূলত ‘মিডল-আর্থ’ ইউনিভার্সের জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে ফ্রোডো ব্যাগিন্স হল ‘দি লর্ড অফ দ্য রিংস’ উপন্যাসের নায়ক। দুজন দুটো আলাদা কাহিনীর নায়ক, তাই তাদের মধ্যে কম্পেরিজন হওয়াটা সহজ না। তবুও কয়েকটা পয়েন্ট নিয়ে সামান্য আলোচনা করতে চাই।
দায়িত্ব সচেতনতা:
বিলবো এবং ফ্রোডো, দুজনের অ্যাডভেঞ্চারের নিজস্ব গুরুত্ব আছে। কিন্তু বিলবো অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার পেছনে মূলত কাজ করেছে বোরনেস। সে বাড়িতে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে কাটাতে বোর হচ্ছিল, এমন সময় একটা অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার সুযোগ আসলে সেটাকে বেশ দ্বিধার সঙ্গে গ্রহন করে। যেটা পরবর্তীতে তার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। কিন্তু ফ্রোডোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিল পুরোপুরি উল্টো। সে বাড়িতে সুখে থাকতে থাকতে মোটেও বোর হচ্ছিল না। বরং সে নিজের মত জীবন উপভোগ করছিল, এমন সময় সে জানতে পারে, একটা বিরাট দায়িত্ব যদি সে না নেয় তাহলে পৃথিবীর উপর এক ভয়ংকর অভিশাপ নেমে আসবে। ফ্রোডোর কোনো দরকার ছিল না, নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর পথ বেছে নেয়া। কিন্তু সে পিছপা হয়নি। এই জায়গাতেই ফ্রোডো ছাড়িয়ে গেছে বিলবোকে।
সাহসিকতা:
শক্তি, ক্ষমতা, সবদিক থেকেই সে ছিল সামান্য। এমন কোনো জ্ঞানী বা বিরাট কোনো যোদ্ধাও সে নয়। কিন্তু একটা মাত্র জিনিস যেটা মিডল-আর্থের সবার চেয়ে তাকে সবচেয়ে শক্তিশালী করে তুলেছে সেটা হল তার সাহস। সে জানত সম্ভবত সেই যাত্রা থেকে আর তার ফেরা হবে না, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে সে তার নিজের সব সম্পদ, ভবিষ্যত, দেশ, বন্ধু, এমনকি জীবন বিলিয়ে দিতেও পিছপা হয়নি। এমন সাহস সম্ভবত মিডল-আর্থের সবচেয়ে বীর যোদ্ধাও দেখাতে পারেনি। এইজন্যই ফ্রোডো নায়ক। আর বিলবোর সাথে তুলনা করলে বলতে হয়, বিলবো অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছিল তার ঘটনাবিহীন জীবনে একটু টুইস্ট আনার জন্য, বাইরের পৃথিবীর স্বাদ নিয়ে আবার ফিরে আসার জন্য। কিন্তু ফ্রোডো যাত্রা ছিল না ফেরার যা্ত্রা।
মমত্ববোধ:
গলামের জন্য ফ্রোডোর মধ্যে যে মমত্ববোধ আমরা দেখতে পাই সেটার তুলনা দেয়াও কঠিন। সে গলামকে নিজের জায়গায় বসিয়ে ভাবতে থাকে। এই এমপ্যাথি, সত্যিকারের একটা নায়কোচিত গুণ। বিলবোর মধ্যেও এই গুণ আমরা দেখতে পাই। গুহার মধ্যে সুযোগ পাওয়ার পরেও সে গলামকে খুন করেনি। আবার, ফ্রোডোর যখন কেউ ছিল না তখন বিলবোই ফ্রোডোকে সুন্দর একটা জীবন দেয়ার দায়িত্বটা নেয়। এটা অসাধারণ। তাই মমত্ববোধের জায়গায় দুজনে সমানে সমান।
যত্নশীলতা:
অন্যের ভালো লাগা-মন্দ লাগা এই ব্যাপারগুলোতে বিলবো যতটা যত্নশীল ফ্রোডোকে আমরা ততটা যত্নশীল হিসেবে পাই না। এইজায়গায় বিলবো এগিয়ে যাচ্ছে।
ধৈর্যশীলতা:
এই জায়গাটাতে একটাই মন্তব্য করা বেশ কঠিন। কারণ ফ্রোডো আর বিলবোর জার্নি সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। ফ্রোডোর জার্নি প্রকৃতিগতভাবেই বিলবোর জার্নির চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে ফ্রোডো বিলবোর চেয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু আমরা বিলবোকে এরকম কঠিন সিচুয়েশনে কখনও পাই নি তাই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে ফ্রোডোর জায়গায় বিলবো থাকলেও একইরকম ধৈর্যশক্তির পরিচয় দিতে পারত কি না। তবে একটা কথা বলাই যায়, বিলবোর জার্নিতে সবসময় এমন অনেকে ছিল যারা বিলবোকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট কোয়ালিফাইড(অন্তত রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করার জন্য)। কিন্তু ফ্রোডোর ক্ষেত্রে আসলে কেউ ছিল না। এ্খানে আবার ফ্রোডো এগিয়েই যাচ্ছে।
শেষকথা:
আরও অনেকদিক আলোচনায় আনা যায়। কিন্তু লেখাটা বেশি বড় করার ইচ্ছা নাই। শেষে যেটা বলতে চাই, নিঃসন্দেহে বিলবো এবং ফ্রোডো, দুটোই অসামান্য চরিত্র। কিন্তু টোকিন যেভাবে দেখিয়েছেন তাতে বিলবোর চেয়ে ফ্রোডো একটু হলেও এগিয়ে যায়।