রিভিউ লিখেছেন নবনিতা প্রামাণিক। বিস্তারিত এবং নির্দেশনামূলক রিভিউয়ের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
বইয়ের নাম : দি ফেলোশিপ অফ দ্য রিং
লেখকের নাম : জে. আর. আর. টোলকিন
অনুবাদকের নাম : মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম : ঐশ্বর্য প্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা
প্রকাশকাল : অক্টোবর ২০২০
“লর্ড অফ দ্য রিংস” সিরিজে ভলিউম আছে তিনটি। তিনটি ভলিউমে অন্তর্ভুক্ত মোট ছয়টি বই নিয়েই এই বিশ্ববিখ্যাত ফ্যান্টাসি সিরিজ। যদিও লেখক অর্থাৎ টোলকিন সাহেবের ইচ্ছে ছিল অন্যরকম। তিনটি ভলিউমে প্রকাশ না করে বইগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি খণ্ডে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। নামকরণের যাবতীয় কাজটুকুও সেভাবেই ঠিক করে রেখেছিলেন।
কিন্তু প্রকাশকের হস্তক্ষেপে টোলকিনের সেই ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি তখন। পরে অবশ্য বাস্তবতা পাল্টে যায়; ধীরে ধীরে “লর্ড অফ দ্য রিংস” সিরিজের প্রাসঙ্গিকতা বাড়তে থাকে। এবং অনেক বছর পর – টোলকিনের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছয় খণ্ডে প্রকাশিত হয় এই সিরিজ; যার প্রথম বইয়ের নাম “দি ফেলোশিপ অফ দ্য রিং”। বইটিকে সম্প্রতি বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত করেছেন মহিউল ইসলাম মিঠু।
ছবি: নবনীতা প্রামাণিক
কাহিনী সংক্ষেপ
মিডল আর্থ – এক বিস্ময়কর ইউনিভার্স। এই ইউনিভার্স এলফ, বামন, মানুষ আর হবিটদের ইউনির্ভাস। এই ইউনিভার্স বহুল আলোচিত সেই “ওয়ান রিং” – এর ইউনিভার্স। কিন্তু “ওয়ান রিং” কী জিনিস?
“ওয়ান রিং” – এর ব্যাপারটা ঠিকঠাকভাবে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে এগারেগিয়নের এলফদের রাজ্যে। সে অনেক আগের কথা! এলফরা তখন ম্যাজিক রিং তৈরি করত। এবং এলফ রাজাদের কাছে ছিল তিনটি রিং। বামন রাজাদের কাছে ছিল সাতটি; সমগ্র মানবজাতির কাছে ছিল নয়টি। কিন্তু সবগুলো রিংকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডার্কলর্ড সাউরন তৈরি করেছিল “গ্রেট রিং”। আর এটাই সেই বিখ্যাত “ওয়ান রিং”!
“One Ring to rule them all, One Ring to find them,
One Ring to bring them all and in the darkness bind them.”
হ্যাঁ, এই একটি রিং দিয়েই বাকি সবগুলো ম্যাজিক রিংকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অবধারিতভাবেই; দারুণ শক্তিশালী ছিল এই রিং! ডার্কলর্ড সাউরন জানত; “ওয়ান রিং” সাথে থাকলে মিডল আর্থে অন্ধকার নামিয়ে আনতে পারবে সে। পারবে পুরো ইউনিভার্স জুড়ে নিজের ধ্বংসের রাজত্ব কায়েম করতে। কিন্তু…
কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায়; “ওয়ান রিং” ডার্কলর্ড সাউরনের হাতছাড়া হয়ে গেল। আর তারপর? তারপর হাসিখুশি বোকা হবিট, বিলবো ব্যাগিন্সের কাছে এসে পড়ল সেই “ওয়ান রিং”। এভাবেই একদিন বিলবোর রিং এসে পড়ল ফ্রোডোর হাতে।
দি অর্ডার অফ দি ওয়াইজ, গ্যান্ডালফের সংস্পর্শে এসে “ওয়ান রিং” এর ব্যাপারে চমকপ্রদ সব তথ্য জানার সুযোগ পেয়ে যায় ফ্রোডো। রহস্যময় “ওয়ান রিং” – এর অশুভ প্রভাব থেকে শায়ার তথা মিডল আর্থকে রক্ষা করার লক্ষ্যে শুরু হয়ে যায় ফ্রোডোর দুঃসাহসিক অভিযান।
“The Road goes ever on and on
Down from the door where it began.
Now far ahead the Road has gone,
And I must follow, if I can,
Pursuing it with eager feet,
Until it joins some larger way
Where many paths and errands meet.
And whither then? I cannot say”
এই অভিযানের গন্তব্য কোথায়?
এই অভিযানের গন্তব্য মাউন্ট ডুম।
কেননা মাউন্ট ডুমের জ্বলন্ত লাভায় ফেলে দিলেই ধ্বংস হয়ে যাবে “ওয়ান রিং”! ফলে মিডল আর্থ পাবে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি। আর তাই তো মাউন্ট ডুমের উদ্দেশ্যে পথে নেমেছে ফ্রোডো। সাথে আছে মেরি, পিপিন আর স্যাম। তবে প্রশ্ন তো থেকেই যায়, এই পথ কি এতই সহজ? উত্তরটা হচ্ছে, না।
পথের ধারে লুকিয়ে আছে ব্ল্যাক রাইডারদের জিঘাংসা। আরও আছে দুর্ভেদ্য ওল্ড ফরেস্ট, রহস্যময় ব্যারো ডাউন। কত শত বিপদের হাতছানি!
কিন্তু কোন সুদূর অজানায় গিয়ে শেষ হয় এই পথ?
পর্যালোচনা
“ফ্যান্টাসি” যাদের পছন্দের জায়গা, “লর্ড অফ দ্য রিংস” নামটি তাদের ভীষণ চেনা। তাছাড়া কমবেশি সকল বইপ্রেমী-ই হয়তো এই সিরিজের নাম শুনে থাকবেন। আমিও শুনেছিলাম। সিরিজের বইগুলো পড়ার অপেক্ষা করছিলাম।
এবং অবশেষে সুযোগ হয়ে গেল সিরিজের প্রথম বইটি পড়ার। হঠাৎ করে দেখলে মনে হয়, অবাস্তব রূপকথার কাহিনী। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়; রূপকথার আবরণে কী দারুণ বাস্তব এই কাহিনী!
“Many that live deserve death. And some that die deserve life. Can you give it to them? Then do not be too eager to deal out death in judgement. For even the very wise cannot see all ends.”
অর্থ কিংবা ক্ষমতার লোভের বশবর্তী হয়ে দ্বন্দ্বের সূচনা তো আর রূপকথা নয়! এসব তো আমাদের রোজকার জীবনের গল্প। এবং জীবনের এই গল্পগুলো টোলকিন উপস্থাপন করেছেন একটু ভিন্নভাবে, রূপকথা কিংবা ফ্যান্টাসির মোড়কে।
তাছাড়া শুধু কি দ্বন্দ্ব? বন্ধুত্ব আছে, ত্যাগ আছে। নিজের গণ্ডিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গল্প আছে।
বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত এই বইটি পড়ার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ছিল। অন্য ভাষার সকল মাধুর্য চিরচেনা বাংলায় হয়তো ঠিকঠাকভাবে ফুটে ওঠেনি। টোলকিনের শক্তিশালী বর্ণনাশৈলী হয়তো পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব হয়নি বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। কিন্তু – যেটুকু সম্ভব হয়েছে; সেটুকু পড়তে খারাপ লাগেনি। ভালোই লেগেছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে; ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ের ব্যাপারটা! পুরোপুরি ভিন্ন ধারার একটি ইউনিভার্স তৈরি করার কাজটা আমার কাছে যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে হয়। এক্ষেত্রে “মিডল আর্থ” – এর স্রষ্টা, টোলকিন সাহেব নিঃসন্দেহে সফল। সৃষ্টিতত্ত্ব তো অবশ্যই; পাশাপাশি মিডল আর্থের রয়েছে নিজস্ব এথিকস।
মিডল আর্থের নিবাসী যারা রয়েছে; তাদের প্রত্যেকের চরিত্রেই বৈচিত্র্যময়তা খুঁজে পাওয়া যায়। বিলবো, ফ্রোডো, গ্যান্ডালফ, সাউরন, ব্ল্যাক রাইডার, টম বোম্বাডিল, গোল্ডবেরি, স্ট্রাইডার, মেরি, পিপিন, স্যাম – পুরো কাহিনী জুড়ে অসংখ্য চরিত্রের উদ্ভব ঘটেছে। এবং প্রতিটি চরিত্র-ই গুরুত্বপূর্ণ, নিজগুণে গুণান্বিত।কেননা টোলকিনের চরিত্র নির্মাণের দক্ষতা অসাধারণ।
বাংলা ভাষায় মিডল আর্থ সম্পর্কে খুব সুন্দর ধারণা দিয়েছেন মহিউল ইসলাম মিঠু। রূপান্তরের ভাষা দুর্বোধ্য লাগেনি; সহজ বলেই মনে হয়েছে। কিছু কিছু অসঙ্গতি অবশ্য চোখে পড়েছে। যেমন : ফ্রোডোর ছদ্মনাম এক জায়গায় আন্ডারহিল, আরেক জায়গায় আন্ডারউড – যদিও এ ধরনের ভুলের সংখ্যা খুবই কম। প্রুফ রিডিং এবং বেটা রিডিংয়ের কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হয়েছে বোঝা যায়। প্রচ্ছদটা সুন্দর, প্রোডাকশন কোয়ালিটিও বেশ ভালো।
এবং “লর্ড অফ দ্য রিংস” সিরিজের প্রথম বই, “দি ফেলোশিপ অফ দ্য রিং” পড়ার পর এখন ইচ্ছে করছে; ঘুরে আসি মিডল আর্থ থেকে। শায়ারের হবিটনে ছোট্ট একটা গর্ত তৈরি করে হাসিখুশি হবিটদের সাথে কাটিয়ে দিই বাকিটা জীবন। ধন্যবাদ।
বইটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন: দি ফেলোশিপ অফ দ্য রিং (বুক ১) – বই পরিচিতি