বই: শক ট্রিটমেন্ট
লেখক: জেমস হেনরি চেজ
অনুবাদ: সায়েম শামস
প্রকাশক: বইটই (অডিওবুক)
দাম: ১০০ টাকা (৫০% ডিসকাউন্ট)
বেশ কিছু অডিওবুক প্লাটফর্ম এখন বাংলাদেশে আছে। আর আমি সেগুলোর ম্যাক্সিমাম অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছি। শক ট্রিটমেন্ট বইটা শুনতে বেশ সময় লাগলো কারণ মাঝে একটা লম্বা বিরতি গেছে। লম্বা বিরতির কারণ এ্ইটা না যে বইটা যথেষ্ট ভালো না। বিরতির কারণ নিজের ব্যস্ততা। অবশ্য এই ব্যস্ততার জন্যই বই পড়ার পরিবর্তে বই শোনাটাকে বেছে নেয়া।
লেখক পরিচিতি::
জেমস হেনরি চেজ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ থৃলার লেখকদের একজন। তার আসল নাম রেনে লজ রেমন্ড। ভদ্রলোক অনেকগুলো ছদ্মনামে লিখতেন। ছদ্মনাম গুলোর অন্যতম হল জেমস হেডলি চেজ, রেমন্ড মার্শাল, আর রেমন্ড, অ্যাম্ব্রোজ গ্র্যান্ট। ‘দ্য ক্যানন চেজ’ নামে একটা সিরিজ লিখেছেন, এই সিরিজের জন্য তাকে ‘কিং অব থৃলার রাইটার্স ইন ইউরোপ’ নামে ডাকা হয়।
বই নিয়ে পেছনের কথা:
খ্যাতনামা এই লেখকের এই শক ট্রিটমেন্ট শিরোনামের বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে। বেশ কিছু মজার টুইস্ট আর সাসপেন্স সমৃদ্ধ বইটা একই সাথে অনেকগুলো জনরায় ফেলা যায়, যেমন- মার্ডার মিস্ট্রি, কোর্ট রুম থৃলার, রোম্যান্টিক, সাসপেন্স।
জেমস হেডলি চেজের অনেকগুলো বই নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে। যেই বইটি নিয়ে আলোচনা করছি সেটি নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে দুইটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে দুইটাই বলিউড মুভি এবং দুইটাই ১৯৭৩ সালে রিলিজ হয়। একই বছরে একই বইকে বেজ করে দুইটা আলাদা মুভি হওয়ার ব্যাপারটা আরেকটু ভালোভাবে বোঝার জন্য দুইটা মুভিই দেখতে ইচ্ছা করতেছে। দেখা যাক, সম্ভব হলে দেখব এবং দেখে কি বুঝলাম সেটাও জানানোর চেষ্টা করব।
মুভি দুইটা হল ‘এক নারী দো রূপ’ আর জোশিলা। ‘এক নারী দো রূপ’ সিনেমাটা পরিচালনা করেছিলেন মধুসুদন আর অভিনয়ে ছিলেন সিজলিং সোনাক্ষী সিনহার বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা, লেজেন্ডারি মদন পুরী ইত্যাদি।
আর দ্বিতীয় মুভিটা হল, যশ চোপড়া পরিচালিত ‘জোশিলা’। এটাতে অভিনয় করেছিলেন দেব আনন্দ, হেমা মালিনি, ইত্যাদি।
অনুবাদক আর ভয়েস ওভার আর্টিস্ট:
বাংলাদেশের অনুবাদ বইয়ের জগতে সায়েম শামস একটা পরিচিত নাম। তার বেশ কিছু অনুবাদ পড়ার সুযোগ হয়েছে। সহজ ভাষায় লেখেন, দ্রুত পড়ে যেতে খারাপ লাগে না কিন্তু সাহিত্যের যে দোতনা সেটার অভাব বোধ হয়। ফলে ইংরেজি বইটা কেমন ছিল সেটা পড়ে দেখার ইচ্ছা জাগে। তবে সেই চেষ্টা কখনই করিনি। কারণ তার অনুবাদ করা যে কয়টা বইটা পড়েছি তার সবগুলোই সবমিলিয়ে তৃপ্তিদায়ক ছিল। আর মাত্র দুই তিনটা কাজ দেখে মন্তব্য করাটা কাজের কথা না।
এদিকে বইটই-এর অডিও বুকগুলোর ভয়েস আর্টিস্ট কারা সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়া থাকে না। এটা একটা সমস্যা। যিনি ভয়েসওভার দিয়েছেন তার পড়া স্পষ্ট ও সহজে বোধগম্য হলেও, বাচনভঙ্গি আর এক্সপ্রেশন বেশ ফ্ল্যাট। এইটুকু কমতি না থাকলে বইটা শোনার অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক হত তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
বইয়ের কথা::
বইয়ের সামনের কথা, পেছনের কথা, আশেপাশের কথা তো অনেক হল, এবার আসল কথায় আসা উচিত।
শক ট্রিটমেন্ট বইটা লেখক জেমন হেডলি চেজের লেখা স্টিভ হার্মিস সিরিজের চতুর্থ বই। গুড রিডস থেকে ব্যাপারটা জানতে পারলাম, নইলে বইতে স্বল্প সময়ের জন্য উপস্থিত হওয়া স্টিভ হার্মিস চরিত্রটা যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেটা বুঝতামই না।
অনুবাদটা শুনে মনে হয় বইয়ের কেন্দ্রিয় দুই চরিত্র হল টেরি রিগ্যান আর লিন্ডা ডেলেনি। লিন্ডার স্বামী একজন বদমেজাজি পঙ্গু লোক। লিন্ডা তার সাথে ৪-৫ বছর হল সংসার করছে। এর মধ্যে তার পরিচয় হয়, টেলিভিশন সেট মেকানিক টেরি রেগানের সাথে। প্রেম হয়। সেই পরকিয়া প্রেম থেকে একটা খুন। সেই খুনকে কেন্দ্র করেই বই।
যেহেতু রোম্যান্টিক গল্পের ভক্ত নই, তাই বইয়ের প্রথমদিকে টেরি আর লিন্ডার প্রেম বেশ বোরিং মনে হচ্ছিল। কিন্তু বইয়ের ৫ নম্বর চ্যাপ্টার শেষ হওয়ার পরই আগ্রহ জমতে থাকে। তারপর কাহিনি যত এগোতে থাকে সাসপেন্স ততই বাড়তে থাকে। পারফেক্ট পেজ টার্নার বলতে যা বোঝায় বাংলায় অনুবাদ করা ‘শক ট্রিটমেন্ট’ বইটা ঠিক তাই।
বেশ কয়েকটা সুন্দর টুইস্ট দিয়ে শেষ হওয়া বইটার সমাপ্তিটা বেশিরভাগ পাঠকেরই ভাল্লাগবে বলে আমার ধারণা।
১৪৩ পেজের হার্ডবুক প্রকাশিত হয়েছে রোদেলা প্রকাশনি থেকে। আর আমার মত যারা অডিওবুক শুনতে চান তারা পাবেন বইটই অ্যাপে। বইটই অ্যাপ এই লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
Moheul Islam Mithu
Savar, Dhaka
July 14, 2023