“হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে !
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে !
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে ;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ?
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে !”
–জীবনানন্দ দাশ (হায় চিল, কাব্যগ্রন্থ: বনলতা সেন)
ভালো কবিতা এমন একটা জিনিস যেটা কিছু না বুঝেও পড়তে ভালো লাগে। যেমন এই কবিতাটা। কবিতাটা প্রথমবার পড়ি ২০০৮-০৯ সালে। সদ্য কিশোর তখন। প্রথমবার পড়ে আগামাথা কিছুই বুঝিনি। প্রথম পড়ার বছর দুই-তিন পর কবিতাটা আমার মধ্যে এক ধরনের অর্থ আর অনুভূতির জন্ম দিতে লাগল। এর আগপর্যন্ত কিছুই বুঝতাম না, কবিতাটা অসাধারণ, তাই শুধু পড়ার আনন্দেই পড়তাম।
যাই হোক, প্রথমবার পড়ার বছর দুই পরে কবিতাটা যে অর্থ দিতে লাগল সেটা হল ‘সোনালি ডানার চিল’ বলতে কবি ‘সোনালি স্মৃতি’ বোঝাতে চাইছেন। পুরো কবিতায় একটা স্মৃতিকাতরতা অনুভব করতে লাগলাম আমি। হারানো প্রেমের স্মৃতিতে কাতর এক প্রেমিকের অনুভূতি যেন এই কবিতা। এখনও কবিতাটা আমার মধ্যে এই অনুভূতিটারই জন্ম দেয়।
কবিতায় যেন কবি তার হারানো প্রেমের স্মৃতিকে ডেকে বলছেন, “হে হারানো প্রেমের স্নিগ্ধ স্মৃতি, বেদনায় আর্দ্র আমার মনে আজকাল সারাক্ষণ মেঘের ঘনঘটা। এমন মেঘলা অলস দুপুরে আমার একান্ত নিজস্ব নদীটার পাশে এভাবে কেঁদে কেঁদে কেন উড়াউড়ি কর তুমি? আর কোনো কাজ নাই তোমার? তোমার এইসব পাগলামি আমাকে এলোমেলো করে দেয়। সে চলে গেছে, কিন্তু রাজকন্যা হয়ে আছে। সে তো ফিরবে না, তাকে কবর দিয়ে রেখেছি হৃদয়ের খুব গভীরে। তোমার কান্না শুনলে তার মুখটা বারবার আমার চোখে ভেসে ওঠে, কিন্তু এই মুখটা তো আমি ভুলতে চাই।” তারপর কবিতার বেস্ট লাইন, “কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।”