দুনিয়ার প্রায় সবকিছুতেই আমার আগ্রহ আছে। মরে যাওয়ার সময় আমার বিরাট একটা আফসোস থেকেই যাবে যে দুনিয়ার সবকিছু জানা হল না। সত্যি কথা বলতে, আমার কখনও মরতেই ইচ্ছে করে না। হুমায়ুন আহমেদের মত করে বললে, বলতে হয়, “আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে মানুষ কোথায় গিয়ে থামে।” মরে গেলে তো আর জানা হবে না।
হুমায়ুন আহমেদের কথা যখন উঠল তখন বলেই ফেলি। হুমায়ূন আহমেদ আমার প্রিয় লেখকদের একজন। তালিকায় আরো অনেকে আছেন, সত্যজিত রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনোয়ার হোসেন, রকিব হাসান, জাফর ইকবাল, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ড্যান ব্রাউন, অ্যাডগার রাইজ বারোজ, ইত্যাদি আরো আরো অনেকে। আসলে আমি যত লেখকদের বই পড়েছি, তাদের সবারই কিছু কিছু বই আমার অসাধারন লেগেছে (সম্ভবত)। এভাবে লেখকদের নিয়ে লিখতে থাকলে আমি সারাদিনই লিখতে পারব। তাই শুধু এটুকু বলেই শেষ করতে চাই যে, বই পড়া আমার অন্যতম প্রধান কাজ। বই ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। তবে বইগুলো আশেপাশের লোকজনের ভাষায়, ‘আউটবই’। ক্লাসের পুস্তক আমার আজন্ম শত্রু।
আমার দ্বিতীয় প্রধান কাজ আগে ছিল গান শোনা। ইদানীং আর খুব একটা সময় পাই না। ছোটবেলায় পড়তে পড়তে গান শুনতাম। আজকাল তো পড়াশুনাও করি না। এখানে আমার বিশেষ কোন পছন্দ নেই। সবরকম ভালো গানই আমার ভালো লাগে। রবীন্দ্র থেকে র্যাপ, সবরকমই শুনি। নির্ভর করে মুডের উপর।
এরপরের পছন্দ সিনেমা। এইখানেও আমার পছন্দ খিচুরী টাইপ। নতুন-পুরান, রোমান্টিক- ননরোমান্টিক, সিরিয়াস- আনসিরিয়াস, সবরকমই ভালো লাগে।
আরেকটা বড় আগ্রহের ব্যাপার হল ঘোরাঘুরি। বাবা সরকারী চাকুরী করতেন, সে সুবাদে বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গা আমি ঘুরেছি। ভ্রমন মানে আমার কাছে শুধু তিনদিনের জন্য কোথাও গিয়ে পিকনিক করা আর ছবি তোলা নয়। সেখানকার মানুষ, প্রকৃতি, জীবনযাত্রা, পার্থক্য-মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। এ অর্থে সত্যিকারের ভ্রমন খুব বেশি করতে পারিনি। তবে জীবনে সারা দুনিয়াটা একবার ভ্রমন [আমার অর্থে] করতে চাই।
আরেকটা বিরাট রকম ইচ্ছা আছে। সেটা হল, বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী-সমৃদ্ধ দশটা দেশের তালিকায় দেখতে চাই। চাই, বাংলাদেশ সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য স্বপ্নপুরী হয়ে উঠুক। আমি জানি একদিন বাংলাদেশ সেই জায়গায় যাবে। কিন্তু আমি মরে যাওয়ার আগে এই দিনটা দেখে যেতে চাই। মরার আগে পৃথিবীর সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত দেশের নাগরিক হওয়ার অনুভূতিটা বুকের ভেতর অনুভব করতে চাই।
জীবনে অনেক কিছুই চেয়েছি। যা চাইছি তার প্রায় সবই পেয়েছি। তার মানে এই নয় যে আমার চাহিদা খুব কম, আবার খুব বেশি এমনও নয়। আবার তার মানে এটাও নয় যে, আমি নিজেকে সফল ভাবি। সফলতার সংজ্ঞাটাই আমার কাছে অস্পষ্ট। আমার মনে হয় একটা মানুষ সফল নাকি বিফল তা সে অনুভব করবে মৃত্যুশয্যায়, তার আগে না। তবে এটুকু বলতে পারি, সফল হতেই হবে, এরকম চিন্তা করে কখনও কোন কাজ করিনি। যা ভালো লেগেছে করছি, যা লাগেনি করিনি। সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে আমি কখনই খুব বেশি চিন্তিত ছিলাম না। এখনও নই। গন্তব্যের চেয়ে পথ টাকেই সবসময় বেশি চমৎকার মনে হয়েছে আমার। যা করি ভালবেসে করি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রায় কিছুই করিনা। জোর করে ঢেকি গেলা অভ্যাসটা আমার নেই বললেই চলে।
শুধু স্বপ্ন দেখাতেই আমি সীমাবদ্ধ থাকি না। বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।
কতদিন বাঁচবো, কিভাবে বাঁচব এটা নিয়ে চিন্তা করিনা, যে মুহূর্ত টাকে পাচ্ছি তা উপভোগ করার চেষ্টা করি।
আমার ঘরে একটা জানালা আছে, সেই জানালাটা দিয়ে একটা বিশাল আকাশ দেখা যায়। আমি বিশাল আকাশ দেখা মানুষ, ছোট্ট জানালা দেখা মানুষ নই।
আমার স্বপ্ন বোধ হয় আমার চেয়ে উঁচু। এটা একটা বিরাট সমস্যা। শেষে একটা কথা বলতে চাই, আমি স্বার্থপর মানুষ। কারণ এ পর্যন্ত যারা আমারে ভালোবেসেছে তাদের কারো ভালোবাসার কোন মূল্য আমি দিতে পেরেছি বলে মনে হয় না। তারপরেও তারা আমারে ভালোবেসেই যাচ্ছে। এটাই আমার জীবনের একমাত্র অর্জন বলে মনে করি।