রিভিউটি লিখেছেন: আব্দুল্লাহ আর রায়হান।
সুন্দর লেখার জন্য তাকে ধন্যবাদ।
বইয়ের নামঃ দি আইভরি চাইল্ড
লেখকঃ হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, মহিউল ইসলাম মিঠু (অনুবাদক)
প্রকাশকঃ সবুজপাতা
প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ২০১৫
পৃষ্ঠ্যা সংখ্যাঃ ১৪২
মূল্যঃ ১৮০ টাকা (গায়ের মূল্য)
জনরাঃ অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার / সুপারন্যাচারাল।
লেখককে নিয়ে কিছু কথাঃ
হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড একজন ইংরেজ লেখক যিনি উনিশ শতকের শেষের দিকে অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লিখে নাম কুড়িয়েছিলেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস গুলোর মধ্যে রয়েছে “King Solomon’s Mines”, “She”, “Cleopatra” ইত্যাদি। তার বেশিরভাগ কাহিনীগুলোই আফ্রিকার যেখানে তিনি পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন অজানা এক পৃথিবী। এটা খুব সহজেই বলা যায় যে হ্যাগার্ড ছিলেন তার সময়ের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড লেখকদের মধ্যে একজন।
অ্যালান কোটারমেইনঃ
যারা ইতোমধ্যেই হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের একাধিক লেখার সাথে পরিচিত তাদের সম্ভবত অ্যালান কোয়াটারমেইন সম্পর্কে নতুন কিছু বলার দরকার নেই। তবুও সংক্ষেপে কিছু কথা সেরে নেই। অ্যালান কোয়াটারমেইন একজন বিখ্যাত ইংরেজ শিকারি এবং ক্ষেত্রবিশেষে একজন বণিকও। হ্যাগার্ড তার “কিং সলোমন’স মাইনস” উপন্যাসে প্রথম এ চরিত্রকে তুলে আনেন। ইংরেজ হলেও অ্যালান বেশিরভাগ সময় আফ্রিকাতেই কাটাতে পছন্দ করেন যেখানে তিনি মিশনারি বাবার যত্নে বেড়ে উঠেছিলেন। আফ্রিকার অন্ধকার অঞ্চলগুলোতে সভ্যতার আলো পৌঁছে দেয়া অ্যালানের অন্যতম লক্ষ্য। আফ্রিকানরা তাকে ডাকে মাকুমাজন বলে। বিচক্ষণ ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এ ইংরেজ সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন অ্যাডভেঞ্চারে। মুখোমুখি হন অবিশ্বাস্য সব বিপদের, বেরও হয়ে আসেন নিজস্ব দক্ষতায় আর কিছুটা ভাগ্যর ছোঁয়ায়। দি আইভরি চাইল্ড অ্যালান কোয়াটারমেইন সিরিজের প্রকাশিত অষ্টম বই।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
ঘটনার শুরু ইংল্যান্ডে যখন অ্যালান এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে যান উপন্যাসেরই আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র লর্ড র্যাগনালের বাড়িতে। বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাদের। তার সাথে পরিচয় হয় র্যাগনালের বাগদত্ত্বা লুনা-র সাথেও। ওখানে থাকা অবস্থাতেই তার সাথে দেখা করতে আসে আফ্রিকান দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী হোয়াইট কেন্ডা নামক এক জাতির দুই পুরোহিত। আইভরি চাইল্ডের কথাও প্রথম সেখানেই শুনলেন। দুই বছর পর মূল কাহিনী শুরু। র্যাগনালের স্ত্রীকে উদ্ধার করতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দুইজন, সাথে দুই ভৃত্য নিয়ে। পথে ছোটখাট বিপদ এড়িয়ে পৌঁছে যান তারা হোয়াইট কেন্ডাদের আবাসস্থলে। ওখানে তাদের মারতে হবে শয়তানের পুজারি ব্ল্যাক কেন্ডা-দের শয়তান দেবতা অতিকায় হাতি-কে যা পরিচিত জানা/যানা নামে। এদিকে নেমে আসছে আইভরি চাইল্ড বা হোলি চাইল্ডের একের পর এক অভিশাপ; শুরু হতে যাচ্ছে এক দুই কেন্ডা জাতির মধ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। পারবে অ্যালান তার বন্ধুদের রক্ষা করতে? যানা-কে মারতে? কে এ আইভরি চাইল্ড? এত কিছুর মাঝে লুনা-র ভূমিকাটাই বা কোথায়?
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
হ্যাগার্ডের অন্যান্য উপন্যাসের মতই কাহিনী বর্ণিত হয়েছে প্রথম পুরুষে, অ্যালান কোয়াটারমেইনের জবানিতে। কাহিনী নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ভালোবাসা, আত্নত্যাগ আর বন্ধুত্বের অপূর্ব মিশ্রণে বইটি এ লেখকের অন্যতম সেরা। পড়া শেষে মন খারাপ হয়ে যাবে; সাথে ঘিরে থাকবে একধরনের অপূর্ণ ভাললাগা। অনুবাদ নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। প্রথমেই যা বলতে হয়, অনুবাদকের সাবলীল শব্দচয়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার লেখার ভঙ্গি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে পুরো লেখাটিতেই। বাংলা ভাষাভাষীদের ভাল লাগবে এমন করেই লেখা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এটি সংক্ষেপিত অনুবাদ। আরেকটু ডিটেইল্ড হতে পারত, বিশেষ করে পারিপার্শ্বিকের বর্ণনাগুলো। কিন্তু মূল বই পুরোটা পড়িনি বলে এক্ষেত্রে আসলেই কতটুকু বর্ণনা ছিল জানিনা। এছাড়া কিছু ব্যাপার লক্ষণীয়। যেমন কিছু জায়গায় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার, যেখানে বাংলা ব্যবহার করলেই ভাল শোনাত আমার ধারণা। যদিও অনেক জায়গায় আবার ইংরেজি শব্দ ব্যবহারকেই যথাযুক্ত মনে হয়েছে। এছাড়া প্রকাশনির প্রুফ রিডিং-এ কিছু ভুল ছাড়া আমার এ অনুবাদে খারাপ লাগার কিছু চোখে পড়েনি। নিশ্চিতভাবেই সময় কাটানোর জন্য চমৎকার একটি বই।
আর যার কথা বিশেষ করে বলতে হয় তা হচ্ছে বইটির প্রচ্ছদ। ছবিতে যতটা না, বাস্তবে তার চেয়ে সুন্দর দেখায়। প্রচ্ছদ দেখেই এ বইয়ের প্রতি প্রথম আকর্ষণটা জেগেছিল। উল্লেখযোগ্য, প্রচ্ছদ লেখক নিজেই করেছেন।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪/৫
Goodreads রেটিংঃ ৩.৯/৫
হ্যাপি রিডিং।
বইটি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন: দি আইভোরি চাইল্ড