সুন্দর রিভিউ আর ছবি দুইটাই Hasbitul Hasan Nijhum-এর। মন ভালো হয়ে গেছে আমার। হঠাৎ করে বুকমার্ক ইউজ করতে ইচ্ছা করছে।
বইঃ লিজিয়ন
লেখকঃ ব্রান্ডন স্যান্ডারসন
অনুবাদঃ মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রকাশনীঃ ঐশ্বর্য প্রকাশ
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৭/১০
কাহিনী সংক্ষেপঃ
বইয়ের মূল চরিত্র স্টিফেন লিডস।তিনি জিনিয়াস নাকি মানসিক রোগী – তা সকলের কাছেই প্রশ্ন।তিনি হ্যালুসিনেশনের মাধ্যমে কিছু চরিত্র দেখেন এবং সেসব যে তার হ্যালুসিনেশন তা জেনে বুঝেই মানিয়ে নিয়েছেন নিজের জীবনের সাথে।তার ভাষ্যমতে,তিনি নন,জিনিয়াস হলো তার হ্যালুসিনেশনের চরিত্রগুলো।
একদিন স্টিফেনের কাছে একটি সাদা খাম আসে।তাতে এমন সময়ের একটি ফটোগ্রাফ থাকে,যে সময় ক্যামেরা আবিষ্কৃতই হয়নি।তাহলে সেসময়ের ছবি তোলা হলো কি করে? এটা কি টাইম ট্র্যাভেল?নাকি ফটোশপের কারসাজি? নাকি এর সাথে জড়িয়ে আছে আরো বড় রহস্যজনক কিছু?
রহস্যের সন্ধানেই তার হ্যালুসিনেশনের চরিত্রদের সাথে নিয়ে পাড়ি জমালো তিন ধর্মের কাছেই প্রিয় স্থান জেরুজালেমে।এরপর ঘটে চললো নানা ঘটনা…
এসব ঘটনার বাঁকে কি উদ্ধার হয়েছিলো ক্যামেরার রহস্য? নাকি রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে? নাকি পাঠককে দাঁড় করিয়েছে আরো বড় প্রশ্নের সামনে?
জানতে হলে পড়ে ফেলুন ব্রান্ডন স্যান্ডারসনের লিজিয়ন সিরিজের প্রথম বইটি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
স্টিফেন চরিত্রটির সাথে তেমন কোন সাদৃশ্য না থাকলেও আমি কেন জানি হেনরি বিনসের ছায়া খুঁজে পেয়েছি কিছুটা। হয়তো রোগের মিল থাকার কারণেই…
বইটি ছোট নভেলা আকারের হওয়ায় চরিত্র গঠণের তেমন সুযোগ আসেনি।তবে তা পড়ায় কোন বাঁধার সৃষ্টি করেনি।গল্প দারুণ গতিশীল ছিলো; এক বসাতেই শেষ করতে পেরেছি পুরোটা।গল্পটাই এমন যে আপনি একবার শুরু করলে গল্পই আপনাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। খুবই সামান্য কিছু যৌক্তিক ভুল বাদ দিলে বইটি দারুণ উপভোগ্য ছিলো।
অনুবাদ প্রতিক্রিয়াঃ
মিঠু ভাইয়ের অনুবাদের হাত বরাবরই দারুণ।পুরো গল্পে কোথাও একঘেয়েমিতা আসেনি; বরং অনুবাদ ছিলো একদম সাবলিল।সহজ শব্দের ব্যবহার,ভাষাগত মাধুর্য এবং সাবলীলতা অনুবাদকে করেছে দারুণ উপভোগ্য।
বইয়ের শেষে সবগুলো চরিত্রের বিস্তারিত আলোচনা এবং গল্পে উল্লেখিত কিছু ঘটনার বিবরণ এড করাতে অনুবাদকের মুন্সিয়ানার প্রশংসা করতেই হয়।পাশাপাশি রেফারেন্স এড করাটা আমাকে আরো বেশি সন্তুষ্ট করেছে।
পজেটিভ দিকঃ
১। প্রোডাকশন যথেষ্ট ভালো ছিলো। ঐশ্বর্যের প্রোডাকশন রবাবরই ভালো হয়।এটাও আগেরগুলোর সমান না হলেও খুব একটা পিছিয়েও নেই।
২।প্রচ্ছদটাও গল্পের সাথে দারুণ মানানসই।
৩।গল্পটা যেমন দারুণ ছিলো; অনুবাদও ছিলো তেমন সাবলীল।
৪।কঠিন বা ইংরেজি শব্দের ব্যাখা সম্বলিত নোট পৃষ্ঠার নিচের দিকে দিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি ভালো লেগেছে।
৫। সম্ভবত ৫ টির বেশি বানান ভুল চোখে পড়েনি। আমি পড়তে গেলে সাধারণত বানান আর বাক্যগঠণের দিলে নজর দিয়ে ফেলি না চাইতেও। তাই নিজের পর্যবেক্ষণ থেকেই বলতে পারি,বাক্যগঠণও ছিলো সহজ-সরল।যা বইটিকে আরো উপভোগ্য করেছে।
৬।বইয়ের শেষে দেয়া চরিত্রের বর্ণনা এবং উল্লেখিত ঘটনার বর্ণনা বইটির মান আরোএকধাপ বাড়িয়েছে।
নেগেটিভ দিকঃ (৩ নং পয়েন্ট থেকে স্পয়লার আছে; এর পর থেকে স্কিপ করতে পারেন)
১। কম্পিউটার কে কম্পিটার,আইভি কে আইভ লেখার মতো ব্যাপারটা চোখে লেগেছে।তবে মাত্র একবারই ভুল হয়েছে।আমি খুঁটিয়ে পড়ি বলে হয়তো চোখে পড়েছে।সাধারণ পাঠকের চোখে এসব পড়বে না বলেই বিশ্বাস।
২।পৃষ্ঠার নিচে ব্যবহৃত নোটগুলো শুরুর দিকে শব্দ এবং নোট একই পৃষ্ঠায় থাকলেও মাঝে/শেষের দিকে শব্দের পরের পৃষ্ঠায় নোট চলে গেছে।আর শেষের নোটটা তো শব্দ যে পৃষ্ঠায় ব্যবহার হয়েছে,তার আগের পৃষ্ঠায়ই দিয়ে দেয়া।এটা খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে।
৩।গল্পে অনেক কিছুই বেশ ইজিভাবে দেখানো হয়েছে।বাস্তবতা সম্ভবত এতোটা সহজ নয়।**স্টিফেনের মতো এতো নামী একজন লোকের বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা দূর্বলই মনে হয়েছে।
**আজারি ল্যাবরেটরিজের মতো এতো বড় কোম্পানির সাথে ডিলিং এবং ভিজিটটা কেমন যেন খুবই সাধারণভাবে দেখানো হয়েছে যেন বাড়ির পাশের কোন সুপারশপ থেকে শপিং করে চলে আসলাম।
**আবু সায়াফ গ্রুপের মতো এতো বড় একটা টেরোরিস্ট (?) দলের কর্মকান্ডও কেমন সাদামাটা লেগেছে।আর লোকবলও ছিলো সামান্য।
কিছু প্রশ্নঃ
১। হ্যালুসিনেশন চরিত্রগুলোর সাথে স্টিফেনের কথাবার্তা কিভাবে হতো?মুখে উচ্চারণ করে নাকি জাস্ট মগজের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমেই।
যদি মুখে উচ্চারণ করে হতো,তাহলে উনার সব কথা কেন সামনে থাকা ব্যক্তি শুনতো না?বা শুনলেও প্রতিক্রিয়া দেখাতো না যেখানে আগে থেকে প্রস্তুত থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখানোটা অবশ্যম্ভাবী ছিলো।
আর মগজের চিন্তা-ভাবনায় কথা হলে কিছু জায়গায় সামনের জন সে কথা শুনে নিজের প্রশ্ন ভেবে উত্তর দিতো কি করে?
২।জর্জ ওয়াশিংটনের বাথরুমে গিয়ে ছবি তোলা?আদৌ পসিবল?আর এমন জায়গায় গিয়ে ছবি তুলে আনলে কি অন্তত ক্যামেরাটা নিয়ে জানাজানি হওয়ার চান্স ছিলো না?
হ্যাপি রিডিং…
রিভিউয়ারের প্রশ্নে অনুবাদকের উত্তর:
-লিজিয়ন অনেক নামি মানুষ, কিন্তু তার বাড়িতে কোনো নিরাপত্তাই নাই আসলে। যেটুকু দেখা যাচ্ছে বইতে, (মানে জেসি) সেটাও পুরোটাই লিজিয়নের মস্তিষ্কে।
– ডিলিংটা আজারি ল্যাবরেটরির সাথে যতটা তার চেয়ে বেশি মোনিকার সাথে। এইটা মূলত মোনিকার পার্সোনাল ভেঞ্চার, সে পার্সোনালিই পুরোটা হ্যান্ডেল করছে। নিজের অফিসিয়াল লিংক কিছু কাজে লাগাইছে এই যা!
– হ্যালুসিনেশনদের সাথে কথাবার্তার বেশিরভাগ হয় মস্তিষ্কের ভেতর। কিছু কিছু স্টিফেন উচ্চারণও করে ফেলে কখনও কখনও।
– জর্জ ওয়াশিংটনের বাড়িটা তো এখন মিউজিয়াম টাইপ। দর্শনার্থিদের জন্য খোলা থাকে। মানুষ ঘুরতে টুরতে যায়। তাই, বাথরুমে গিয়ে ছবি তোলা অসম্ভব না।
– ফুটনোটের ব্যাপারে সমস্যা হওয়ার কারণ, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ল্যান্ডস্কেপ মুডে আমাদের বইয়ের দুই পেজকে এক পেইজ ধরে। বইতে এইজন্য এক পেজ আগে পড়ে হয়ে যায় বা পেজের নিচের দিকে ফাঁকা রেখে জিনিসটা মিলাইতে হয়। লর্ড অফ দ্য রিংসে এজন্য পেজের নিচে কোথাও কোথাও ১ইঞ্চির মত ফাঁকা রয়ে গেছে। এখানে সেটা এড়ানোর জন্য ওয়ার্ডের ডিফল্ট ফর্মেটেই করা হল আর কি। আর ফুটনোট নাম্বার তো দেয়া আছে, সমস্যা হওয়ার কথা না।
– বাকি গুলো অনিচ্ছাকৃত। বইয়ের কাজ যত্ন করে করা হইছে আসলে। তারপরেও ছাপাখানায় ভূত থাকে।
-আর আবু-সায়াফ দুইজনকে হ্যান্ডেল করার জন্য হাইলি আর্মড ১৫-২০ জনের একটা গ্রুপ নিয়ে ইজরায়েলে গেছে। এটাকে হালকা বলা যায় না, তাই না?
-গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করানো, তারপর লাখ লাখ টুরিস্টের মাঝে স্টিফেনদের টিমকে লোকেট করে এক্সট্র্যাক্ট করা । এগুলোর জন্যও তো মানুষ লাগছে, ক্ষমতা লাগছে।
-আর গল্পটাও তো ছোট পরিসরের। শুধু প্রধান ঘটনাগুলোই এসেছে। আশেপাশে অন্যান্য ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বড় করা হয়নি। এটাও তো ভালো। মূল ঘটনা তো কয়েক সেকেন্ডে ঘটায় ফেলছে। সম্ভবত গল্পের পরিসরে ছোট করার জন্যই লেখক সাহেব সম্ভাব্য অনেক ডিটেইলস সামনে আনেন নাই।
বইটির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন: লিজিয়ন – বই পরিচিতি