আজ জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। ‘বাবা দিবস’। একজন বাবা তার বাচ্চাকে শোনানোর জন্য গল্প বানিয়েছেন, পরবর্তীতে সেই গল্প দুনিয়া জয় করেছে। এরকম ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। ‘দি হবিট’ এমনই একটা গল্প। প্রোফেসর টোলকিন লিখেছিলেন তাঁর বাচ্চাকে শোনানোর জন্য। লেখা শুরু হয় ১৯৩০ সালের প্রথমদিকে। পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন টোলকিন। একটা খাতায় খালি পৃষ্ঠা পেয়ে মনের অজান্তেই লিখে ফেললেন বইয়ের প্রথম লাইন। লেখা শেষ হল ১৯৩২ সালে। লেখার পর বেশ কয়েকজনকে পড়তে দিয়েছিলেন টোলকিন, এদের মধ্যে একজন ছিলেন আরেক বিখ্যাত লেখক সি এস লিউইস।
‘দি হবিট’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। ১৯৫১ সালে বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে(পঞ্চম ইম্প্রেশন) বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন লেখক। ঐসময় ‘দি লর্ড অব দা রিংস’ নিয়ে কাজ করছিলেন টোলকিন। ‘দি হবিট’ আর ‘দি লর্ড অব দা রিংস’-এর স্টোরি লাইনে মিল আনার জন্যই পরিবর্তনটুকু আনা হয়েছিল।
১৯৬৬ সালে বের হয় তৃতীয় সংস্করণ। এবারেও বেশ কিছু পরিমার্জন করা হয়। অনুবাদের ক্ষেত্রে আমরা এই তৃতীয় সংস্করণটিকে মূল বই হিসেবে ব্যবহার করেছি।
লেখকরা মাঝেমাঝেই লেখার ক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেন। ‘দি হবিট’-এর ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। লেখক টোলকিনের এক আন্টির ফার্মের নাম ছিল ‘ব্যাগ এন্ড’। বিলবোর বাড়ি। আবার ১৯১১ সালে টোলকিনের বসন্তটা কেটেছিল সুইজারল্যান্ডের মিস্টি মাউন্টেন্সে বন্ধুদের সাথে হাইকিং করে। এই বইয়ের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে মিস্টি মাউন্টেন্স। বইয়ে দানব মাকড়শাদের দেখা পাবেন পাঠক। ছোটবেলায় নাকি মাকড়শা কামড়েছিল টোলকিনকে। আর ‘ব্যাটল অব ফাইভ আর্মিজ’ হয়তো লেখকের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়েছে।
লেখকের কথা তো গেল। এবার অনুবাদকের কথায় আসি। ‘দি হবিট’ কালজয়ী বই। খুবই কাঁচা হাতে সেই কালজয়ী বইকে বাংলা ভাষায় আনার চেষ্টা করেছি। অবশ্য চেষ্টা করেছি না বলে, চেষ্টা করার দুঃসাহস দেখিয়েছি বললে বেশি সঠিক হয়। মূল বইয়ে লেখকের গল্প বলার স্টাইল অনুসরন করার চেষ্টা করেছি। এটা করতে গিয়ে নিশ্চিতভাবেই ভুল হয়েছে অনেক। এই সব ভুলের পুরো দায় আমার। জানি, পাঠকরা ক্ষমা করবেন আমাকে। প্রায় এক বছরের বেশি সময় কাজ করেছি এই বই নিয়ে। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। এরপরেও অনুবাদে যে কমতি রয়ে গেছে সেই কমতিটা বইয়ের কমতি নয়, আমারই কমতি। এক্ষেত্রেও পাঠকদের কাছ থেকে ছাড় পাব আশা করি।
‘দি হবিট’ একটি অসাধারণ বই। মূল বইয়ের পুরো মজা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারব না, কিন্তু যদি কিছুটাও পৌঁছে দিতে পারি সেটাই যথেষ্ট। তাতেই আমার সব কষ্ট সার্থক।
মহিউল ইসলাম মিঠু
সাভার, ঢাকা।
জুন ২১, ২০১৫