পাঠক প্রতিক্রিয়া: লিজিয়ন (সেলিনা আক্তার)

রিভিউ এবং সুন্দর ফটোগ্রাফির ক্রেডিট সেলিনা আক্তার।

বইয়ের নামঃলিজিয়ন
মূল লেখকঃব্র্যান্ডন স্যান্ডারসন
অনুবাদকঃমহিউল ইসলাম মিঠু
পার্সোনাল রেটিংঃ৪.৫/৫

নামকরণের সার্থকতাঃ
বইটির নামকরণ করা হয়েছে স্টিফেন লিডসের নিকনেইম “লিজিয়ন” অনুসারে।নামটিতে প্রথমবার তাকে সম্বোধন করেছিলেন একজন সাইকিয়াট্রিস্ট।

ছবি: সেলিনা আক্তার

চরিত্র-বিশ্লেষণঃ

*স্টিফেন লিডসঃ
কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র।তার ব্যাপারে রয়েছে নানা মুনির নানা মত।
কেউ কেউ মনে করেন তিনি হরফন মোল্লা(সকল কাজের কাজী) টাইপ লোক,কেউ মনে করেন তিনি নিছকই ছিটগ্রস্ত-উন্মাদ।আবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,তার মস্তিষ্ককে বিশেষ ভাবে ট্রেইন্ড আপের কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্য,অতুলনীয়!।কিন্তু নিজেকে তিনি সিজোফ্রেনিয়ার রোগী হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তার মতে,তিনি মানুষটা সাধারণ হলেও তার হ্যালুসিনেশনের মানুষগুলো এককথায় “জিনিয়াস”!

*উইলসনঃ
স্টিফেন লিডসের বিশ্বস্ত গৃহকর্তা।লিডসের সমস্যার কথা জেনেও বহু বছর যাবৎ লিডসকে ভালোবেসে তার সাথেই আছে।

*মোনিকাঃ
আজারি ল্যাবরেটরিজের ইনকর্পোরেটেড প্রতিনিধি,এ বইয়ে লিডসের অভিযানের সূত্রপাত ঘটে তার নিয়ে আসা সমস্যাটি থেকেই।তিনি পুরোটা সময় ধরে অভিযানে লিডসের সাথে থেকে চমৎকার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।

*রাজনঃ
আজারি ল্যাবরেটরিজের আরেকজন প্রতিনিধি;যিনি কাহিনির শুরুর দিকে ভিলেন হিসেবে আবির্ভূত হলেও কাহিনির উত্থান পতনের সাথে সাথে তার চারিত্রিক ভূমিকারও বেশ পরিবর্তন লক্ষণীয় ছিলো শেষাবধি।

*মেগানঃ
লিডসের বাড়ির ক্লিনিং লেডি।

*জেসিঃ
স্টিফেন লিডসের কাল্পনিক চরিত্র।অস্ত্র চালানোয় অসাধারণ পারদর্শী এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।পুরো কাহিনির কোথাও তার পুরো নাম না জানা গেলেও লিডস এই জাঁদরেল ভদ্রলোককে শুধু ” জেসি” বলেই ডাকে।

*টোবিয়াসঃ
স্টিফেন লিডসের হ্যালুসিনেশনদের একজন।মাঝবয়েসী এই ভদ্রলোকের জানাশোনার পরিধি ব্যাপক,যেনো ছোটোখাটো একটা “উইকিপিডিয়া”!

*আইভিঃ
মাঝবয়সী এই ভদ্রমহিলাও স্টিফেন লিডসের হ্যালুসিনেশন।ব্যক্তিগত সহকারীর মত আবির্ভূত হন লিডসের কল্পনায়।যেকোনো কিছু গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়ে ক্ষমতা অসাধারণ।লিডস তাকে কখনও কখনও মনোবিজ্ঞানীও বলে থাকেন।

*অড্রেঃ
সুন্দরী ও নিজের সৌন্দর্যের ব্যাপারে সচেতন এই হ্যালুসিনেশন হাতের লিখার বিশেষজ্ঞ।

*আরমানডোঃ
হামবড়াই স্বভাবের এই ব্যাক্তিটি নিজেকে মেক্সিকোর সম্রাট মনে করেন।নিজেকে বোঝানোর জন্য সে ” হিজ ম্যাজেস্টি” কথাটা ব্যবহার করে।আরমানডোও লিডসের হ্যালুসিনেশন।প্রোগাম বিশেষজ্ঞ তিনি।

*সালিকঃ
আবু-সায়াফ বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা।

*আইভান্সঃ
উনিও লিডসের হ্যালুসিনেশন।যন্ত্রপাতির জাদুকর,পেশায় মেকানিক।

*আরনডঃ
স্টিফেন লিডসের আরেকজন হ্যালুসিনেশন।টেম্পোরাল মেকানিক্স আর কোয়ান্টম থিওরিতে বিশেষজ্ঞ।কাহিনির একেবারে শেষ দিকে আগমন ঘটে এই পদার্থবিদ ভদ্রলোকের।

*কল্যানীঃ
অল্পবয়সী এই ভদ্রমহিলাও লিডসের আরেক হ্যালুসিনেশন।হিব্রু ভাষায় বিশেষ পারদর্শী।

*স্ট্যানঃ
টোবিয়াসের তথ্যমতে,স্ট্যান নভোচারী।এখানে উল্লেখযোগ্য যে,টোবিয়াস নিজে লিডসের হ্যালুসিনেশন আর স্ট্যান হল টোবিয়াসের হ্যালুসিনেশন।

কাহিনি-সংক্ষেপঃ
স্টিফেন লিডস!
মানসিক রোগী নাকি জিনিয়াস?
এ প্রশ্নের উত্তর সকলের অজানা থাকলেও লিডসের নিজের জীবন চলে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে।
তার এসব অভিযানে সাথে থাকে তার হ্যালুসিনেশনরা।
জিনিয়াস এই কাল্পনিক মানুষগুলোকে নিয়ে নানান রহস্যের মোড়ক উন্মোচন করেছেন স্টিফেন লিডস।
তবে তার অদ্বৈত ও অদ্ভুত স্টাইল নিয়ে তিনি এত এত রহস্যের সমাধা করেছেন যে,সেগুলোই আবার নতুন রহস্য হয়ে গেছে!

একদিন নিজের স্টাডি রুমে প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র ঘাটতে গিয়ে দেখা যায়,লিডসের কাছে একটি বেনামী চিঠি এসেছে।ভেতরে শুধু একটা ফটোগ্রাফ!
পর পর তিনবার আসে এমন তিনটা ফটোগ্রাফ।
কিন্তু ফটোগ্রাফগুলো সেই সময়ের যে সময় ক্যামেরা নামক যন্ত্রটারই অস্তিত্ব ছিলো না!
যখন ক্যামেরাই ছিলো না সেই সময়কার ছবি তোলা হলো কিভাবে?
এসবের পেছনে কি রয়েছে গোপন কোনো রহস্যের?
এত যুগ ধরে প্রচলিত মেকানিক্সের সূত্রগুলো কি তাহলে ভুল জানতাম আমরা?
নাকি সবই নিছক ফটোশপের ধাপ্পাবাজি?
আর এসবের সাথে লিডসের হারানো ভালোবাসা সান্দ্রারই বা কি সম্পর্ক?
কি রহস্য লুকিয়ে আছে এসবের আড়ালে?

কৌতূহলী লিডস জড়িয়ে পড়লেন অভিযানে।
লিডস কি পেরেছিলো ছবিগুলোর রহস্যের জাল ভেদ করতে?
আর সে কি পেরেছিলো সান্দ্রার যোগসূত্র নির্ণয় করতে?
নাকি রহস্য নিছকই রহস্যের মায়াজালই রয়ে গিয়েছিলো?

জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে সাড়াজাগানো নভেলা সিরিজ “লিজিয়ন” এর প্রথম বইটি!

পাঠ-প্রতিক্রিয়া
একগাদা রহস্য,সামান্য ইতিহাস,একটু বিজ্ঞান,অনেকগুলো প্রশ্ন আর কিছু অসাধারণ মেধাবী কাল্পনিক মানুষকে নিয়ে টানটান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ভরপুর এই নভেলার প্রতি পাতায় পাতায় যেনো পাঠকদের জন্য রয়েছে চমক!

নেগেটিভ দিকঃ
বইটিতে কোনো নেগেটিভ দিক আমি খুঁজে পাইনি;তবে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রিন্টিং মিসটেইকে বানানে কিছু সমস্যা ছিলো যা সম্ভবত হয়েছে মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে।
আর কাহিনির প্রবাহ কিছুটা ধীরগতিসম্পন্ন হলেও সেটাও যেনো বেশ উপভোগ্য ছিলো

প্রত্যাশাঃ
“নভেলা সিরিজ “লিজিয়ন” এর বাকি পর্বগুলোর অনুবাদও খুব শীঘ্রই আসুক”-পাঠকদের এই প্রত্যাশা।

 

বইটির ব্যাপারে বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন: লিজিয়ন – বই পরিচিতি

Author: Moheul I Mithu

মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। তার পাঠকপ্রিয় অনুবাদ গুলোর মধ্যে রয়েছে: দি হবিট, দি লর্ড অফ দ্য রিংস, পার্সি জ্যাকসন, হার্ড চয়েসেজ, দি আইস ড্রাগন, লিজিয়ন, প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে, দি আইভরি চাইল্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বিশ্বখ্যাত ২০টির বেশি বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল। (লিখেছেন: লে: কর্নেল রাশেদুজ্জামান)

Share This Post On

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link
Powered by Social Snap