অনুবাদকের কথা- দি আইস ড্রাগন

বইয়ের শুরুতে অনুবাদকের কথায় আমি এই লেখাটার কিছু অংশ দেয়া আছে।

ফুল কভার

বেশ কিছুদিন আগে, আমি আমার কয়েকজন বন্ধুকে আমার লেখা একটা ছোটগল্প পড়তে দিলাম। গল্পটা লেখার সময় আমার মাথায় যে বিষয়টা ছিল, সেটা হল, “অদৃষ্টের অবিচার”। কিন্তু কথাগুলো সরাসরি লিখতে তো ভালো লাগে না। তাই গল্পটাকে হালকা প্রেমের মোড়কে মুড়িয়ে দিয়েছিলাম। গল্পটা পড়ার পর বন্ধুরা বলল, গল্পটা পড়ে তাদের কাছে প্রেমের গল্প মনে হয়েছে। তাদের কোনো দোষ অবশ্যই দেবনা। আমিই পাতি লেখক, সম্ভবত নিজের কথাটা বোঝাতে পারি নি।

মহিউল ইসলাম মিঠু

এই কাহিনিটা বলার কারণ হল, আইস ড্রাগন গল্পটা ছোট্ট একটা মেয়ের বালখিল্যতার মোড়কে মোড়ানো একটা ” বন্ধু-বিয়োগ”-এর সূ² অথচ গভীর এক বেদনার গল্প। যে সব লেখক এরকম সহজ একটা গল্পের ছলে হৃদয়ের গভীরের অজানা বা মরচে পড়া অনুভূতিগুলো নাড়িয়ে দেন, প্রায় সময়ই দেখেছি, এই জাতের লেখকরা খুব দ্রæত আমার হৃদয়ের গভীরে জায়গা করে নেন। জর্জ আর. আর. মার্টিন যে তেমনই একজন এব্যাপারে সম্ভবত অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন।
কিন্তু সববয়সের পাঠকের পাঠোপোযোগী একাধিক লেয়ারের এই গল্পকে আমি বাংলায় কতটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি সেটা বিচার করবেন পাঠক।
যদি কিছু কমতি থাকে তাহলে জানাবেন, ভবিষ্যতে আবার যতটা পারি সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করব। কারন, আমি নিজের কাছে প্রমিজ করেছি, এখন থেকে শুধু সেই বইগুলো নিয়েই কাজ করব, যেগুলো নিয়ে বারবার কাজ করতেও আমার কোনো বিরক্তি আসবে না।

প্রচ্ছদ

এবার বইয়ের কথায় আসা যাক। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। ‘গেম অব থ্রোন্স’ প্রকাশের দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে।কিন্তু আর আর মার্টিনের আইস অ্যান্ড ফায়ার ইউনিভার্সের জন্ম এই বই দিয়েই। সাহস, ত্যাগ, আর বন্ধুত্বের এই ছোট্ট শিশুতোষ বইটি মনে যে দাগ কেটে যায় সেটা বহুদিন রয়ে যাবে। মানবমনের চিরন্তন বৈপরীত্যের যে সহজ কিন্তু শক্তিশালী প্রকাশ মার্টিনের লেখায় পাওয়া যায়, এই ছোট্ট বইটাতেও তা পাওয়া যাবে।

বইটা পড়ারা সময় শান্তিময় এক শান্ত অনুভূতি আমাকে ঘিরে ছিল। পড়ার পরই আমি জানতাম, আমি বইটা অনুবাদ করতে চাই। অনুবাদ করতে গিয়ে আনন্দটা পেয়েছি আরো বেশি। কারন আমার মনে হয় অনুবাদ করার জন্য যখন ভাবতে হয় তখন সাহিত্যের বাহ্যিক পর্দাটার ভেতরের ব্যাপারগুলো সামনে আসার ফুসরত পায়। পড়ার সময় বইটা শুধু ভালো লেগেছিল। অনুবাদ করার পর এটার ফ্যান হয়ে গেছি।

বইটাতে যে আনন্দ আছে বাংলা অনুবাদে সেটার শতভাগ পাঠকের কাছে পৌছে দেয়ার যোগ্যতা আমার নেই জানি। তবুও কিছুটা হয়তো পেরেছি। তাতেই আমি খুশি। আমার পাঠকরাও সেটুকুতে অসন্তুষ্ট হবেন না, সেটাও জানি। তবে শেষে বলতে চাই, বইটা নিয়ে আমি গর্বিত। আমার কাছে একটা ভালো কাজ, সারাজীবনের সম্পদ। তাই গর্ব হলে দোষ দেয়া যায় না, তাই না? যতবার আমি বইটার দিকে তাকাবো ভালো লাগবে। জীবনের অর্থ নতুন মাত্রা পাবে। তবে ভালো একটা কাজ যে মানসিক শান্তিটা দেয়, তার সাথে আর কিছুরই তুলনা চলে না।

এ তো গেল আমার কথা। পাঠকদের অনেকেরই হয়তো ভালো লাগবে না আমার অনুবাদ। তাদের বলব, অনুবাদ ভালো না লাগলে, অরিজিনালটাই পড়ুন। বইটা ভালো।  সাইজেও ছোট, বেশি সময়ও লাগবে না।

বইটির ব্যাপারে সব আপডেট এবং দি আইস ড্রাগন সংক্রান্ত সবকিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন

Author: Moheul I Mithu

মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। তার পাঠকপ্রিয় অনুবাদ গুলোর মধ্যে রয়েছে: দি হবিট, দি লর্ড অফ দ্য রিংস, পার্সি জ্যাকসন, হার্ড চয়েসেজ, দি আইস ড্রাগন, লিজিয়ন, প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে, দি আইভরি চাইল্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বিশ্বখ্যাত ২০টির বেশি বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল। (লিখেছেন: লে: কর্নেল রাশেদুজ্জামান)

Share This Post On

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link
Powered by Social Snap