পার্সি জ্যাকসন: দ্য লাইটনিং থিফ (পাঠক প্রতিক্রিয়া)

রিভিউ লিখেছেন সালেহ আহমেদ মুবিন, তরুন লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক। বিশ্বখ্যাত সিরিজ “দি গেম অব থ্রোন্স”-এর অনুবাদ করে মন জয় করে নিয়েছেন শত পাঠকের মন। সুন্দর রিভিউটির জন্য তাকে ধন্যবাদ।

প্রচ্ছদ: ইবুক

পার্সি জ্যাকসন এ্যান্ড দ্যা লাইটনিং থিফ
রিক রিওর্ডান
অনুবাদঃ মহিউল ইসলাম মিঠু
.
ধরুন আপনি আপনার অত্যাচারী সৎ বাবা এবং ভয়াবহ স্কুল থেকে বহু দূরে সমুদ্রের তীরে শান্তির এক দ্বীপে ছুটি কাটাচ্ছেন। সাথে রয়েছে আপনার মমতাময়ী মা। হঠাৎ সেখানে প্রবল ঝড় বৃষ্টির মাঝেই, একদম মধ্যরাতে হুট করে উপস্থিত হল আপনার স্কুলের বেস্ট ফ্রেন্ড। অবাক হবেন না? এর উপর যদি দেখা যায় আপনার বন্ধুর পা হাঁটুর নিচ থেকে পরিণত হয়েছে ছাগলের খুরে, তাহলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাও বিচিত্র নয়। ধরলাম এসব বাধা বিপত্তি পাড়ি দিয়েই দিলেন। এরপর যদি আপনাকে গাড়ি নিয়ে সেই মধ্যরাতেই তাড়া খেতে হয় পৌরাণিক দানব মিনোটরের, তাহলে কি আদৌ সুস্থ্য থাকা সম্ভব? মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আপনার মা সেই মিনোটরের হাতে থেকেই যদি একরাশ আলোক রেখায় মিলিয়ে যায়? তাহলে আপনার অবস্থাটা কি হবে? বুঝতে পারছি হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। ওয়েট। আসল বিষয়টা এখনও বলিইনি। আপনার বয়সটা তখন থাকবে বার বছর। স্রেফ বার বছর! এবার চিন্তা করে দেখুন।
এই ব্যাপারটাই ঘটল বার বছর বয়সী পার্সি জ্যাকসনের সাথে। হঠাৎ করেই একরাতের মাঝে সে নিজেকে আবিষ্কার করে বসল ভিন্ন আর ভয়াবহ এক জগতে। আবিষ্কার করল সেই জগতের বাসিন্দা সে নিজেও। কোনমতে প্রাণ নিয়ে সে পৌছল ক্যাম্প হাফ ব্লাডে। সেখানেই সে প্রথমবারের মত আবিষ্কার করল যে সে একজন ডেমিগড। তার বাবা স্বয়ং গ্রিক সমুদ্রদেব পোসাইডন! আর আধুনিক অলিম্পাস নাকি এই অ্যামেরিকার এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এরই ছয়শ তলায়!
তবে সব খারাপেরই ভাল দিক থাকে। ক্যাম্প হাফ ব্লাডেই সে পেল ভয়ংকর কিন্তু মায়াবতী বান্ধবী অ্যানাবেথকে, খুঁজে পেল বন্ধু গ্রোভারের পা ছাগ খুরযুক্ত হবার কারন, সেই সাথে পেল বৃদ্ধ শিক্ষক কাইরনকে, যে কিনা হারকিউলিস একিলিসদের মত বিখ্যাত ডেমিগডদেরকে নিজ হাতে শিক্ষা দিয়েছে। আর পেল এক বন্ধু, বড় ভাই লুককে। কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে গেল খুব শিঘ্রই। স্বয়ং দেবরাজ জিউসের অস্ত্র-বজ্র কিভাবে যেন নিখোঁজ হয়ে গেছে। সব দোষ চাপল পার্সির উপরে। তার পেছনে কারন আছে বৈকি। হাতে একটা উপায়ই বাকি আছে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য খুঁজে বের করতে হবে আসল চোরকে। লাইটনিং থিফকে। আর এজন্য পাড়ি দিতে হবে বহু বিপদসংকুল পথ। যেতে হবে অতল পাতালের বহু গভীরে। উল্টেপাল্টে হবে পুরো জগৎটাকে। সময়য় কেবল দশদিন। সাথী হল বন্ধু গ্রোভার আর অ্যানাবেথ। টাইটান লর্ড ক্রনসের এখানে কি সম্পর্ক? শেষে গিয়ে সব রহস্য যখন সমাধানের পথে, আচমকাই পাঠকের চোয়াল ঝুলে পড়বে। জমে উঠবে খেলা। শুরু হবে বন্ধুত্ব, বুদ্ধি, বিপদ আর বিশ্বাঘাতকতার এক উপাখ্যান।

প্রচ্ছদ: হার্ডকভার


পাঁচ বই সিরিজের প্রথম বই হচ্ছে লাইটনিং থিফ। অনলাইন শপ বিবিধের পোষ্ট দেখে হঠাৎই মনে হল বইটা সম্পর্কে সবাইকে জানানো দরকার। গোগ্রাসে গেলা যাকে বলে ঠিক সে ব্যাপারটাই ঘটেছে এই সিরিজের বেলায়। লেখকের রসাত্মক বর্ণনায় মুখ টিপে হেসেছি। পার্সির স্টুপিডিটি, অ্যানাবেথের সাহসীকতা-জ্ঞান আর গ্রোভারের সন্ত্রস্ততায় ডুবে গিয়েছি বইটা পড়তে পড়তে। এত বিচিত্র সব চরিত্রের সমাহার ঘটেছে বইটাতে যে পড়তে শুরু করলে শেষ না করে উপায় নেই। পরতে পরতে চমক, অ্যাডভেঞ্চার আর কিংবদন্তীর সমাহার। ফ্যান্টাসি ঘরানার এই বইটা নিয়ে যে মুভিটা বানানো হয়েছে সেটা যদি দেখে থাকেন, স্রেফ ভুলে যান। বইয়ের সাথে এক বিন্দু মিলও নেই। বইয়ের তুলনায় মুভিটা জাস্ট আবর্জনা। অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে অনুবাদ বেরিয়েছে বইটার। অনুবাদ বেশ ভাল। সুখপাঠ্য। তবে কিছু জায়গায় একটু আটকে আসতে হয়েছে। অনুবাদকের প্রথম দিকের অনুবাদ বলেই হয়তো। কিন্তু সেটা মজা কমায় নি এক বিন্দু। অনেকেই হয়তো বলবে মূল বইটা পড়ার জন্য, তবে বাংলা ভাষাভাষীদের আমি বলব অনুবাদটা পড়েন। তারপর মূলটা পইড়েন। কারনটা বই পড়লেই টের পাবেন। এই বইটা যদি সংগ্রহে থাকে কারো, কোন ভাবেই ফেলে রাখবেন না। অসাধারণ জিনিস ফেলে রাখতে হয় না। বইটা যারা এখনও পড়েননি, তাদের দুর্ভাগ্য বলতে হয়। যেখান থেকে পারেন সংগ্রহ করে জাস্ট শুরু করে দিন। পড়তে থাকুন। খুব শিঘ্রই অসাধারণ একটা জগতের সাথে যে একাত্ম হয়ে যাবেন তা বলাই বাহুল্য। বইটা রকমারিতেই পাবেন। ফেসবুকে বুকস্ট্রিটে, বিবিধে পাওয়া যাবে। পিডিএফ চাইতে আসবেন না প্লিজ। বলতে গেলে এই কদিন আগের বই।

বইটির ব্যাপারে সব বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

Author: Moheul I Mithu

মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। তার পাঠকপ্রিয় অনুবাদ গুলোর মধ্যে রয়েছে: দি হবিট, দি লর্ড অফ দ্য রিংস, পার্সি জ্যাকসন, হার্ড চয়েসেজ, দি আইস ড্রাগন, লিজিয়ন, প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে, দি আইভরি চাইল্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বিশ্বখ্যাত ২০টির বেশি বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল। (লিখেছেন: লে: কর্নেল রাশেদুজ্জামান)

Share This Post On

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link
Powered by Social Snap