পাঠ প্রতিক্রিয়া: লিজিয়ন (হাসান)

বিস্তারিত রিভিউটি দিয়েছেন হাসান। পরামর্শের জন্য তাকে ধন্যবাদ।

বইয়ের নাম: লিজিয়ন
লেখক: ব্র্যান্ডন স্যান্ডারসন
অনুবাদ : মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রকাশনী: ঐশ্বর্য প্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬

স্পয়লার অ্যালার্ট

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

স্টিফেন লিডস , একাধারে বুদ্ধিমান, মানসিক ছিটগ্রস্ত এবং বিভিন্ন কাজে পারদর্শী একজন মানুষ । নিজের আসে পাশে এমন সব চরিত্রকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যাদের অস্তিত্ব শুধু তার কাল্পনিক জগতেই । তবে সেই কাল্পনিক চরিত্রগুলো যথাক্রমে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, চিন্তাশীল এবং পর্যবেক্ষণে পারদর্শী । আর তাদের সাহায্যেই সে হয়ে উঠে একজন অসাধারণ মানুষ আবার কখনো বা গবেষণার বিষয়বস্তু । এমনি সাদামাটা জীবনে একদিন হঠাৎ আবির্ভূত হলো কিছু ছবি । ক্যামেরা আবিষ্কারের বহু আগে তোলা এইসব ছবি শত বছরের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার মতোই ক্ষমতা সম্পন্ন । আর এর সাথে জড়িয়ে যায় তার দশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার নাম । অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে নামতে হয় এক ইঁদুর-বিড়াল খেলায় । একের পর এক বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকে সত্যির খুব কাছাকাছি । এমন একটি সত্যি যার উদঘাটনে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে হাজার বছরের বিশ্বাস , প্রাণ যেতে পারে লাখো নিরীহ মানুষের। আর এই যাত্রাপথে সকল ধাঁধা সমাধানে সাহায্য করতে থাকে তার বিশ্লেষণী মস্তিষ্কের রূপায়িত চরিত্রগুলো । তবে একদম শেষ মুহূর্তে সবই হয়ে ওঠে ঝাপসা । তবে কি স্টিফেন লিডস পারবে সমূখ এই বিপদকে আটকাতে?

বিজ্ঞান,ধর্ম, জাতি-বিন্যাস, হিউম্যান সাইকোলজি ,ইতিহাস এবং অল্প কিছু অ্যাকশনে ভরপুর এই বইটি আপনার মস্তিষ্ককে চালিত রাখবে পুরোটা সময়। আর শেষে এর সাইন্টিফিক এক্সপ্লেনেশনটাও পাঠকদের আকৃষ্ট করবে খুব ভালো ভাবেই ।

লেখক এবং বই সম্পর্কে কিছু মন্তব্য:

— ব্র্যান্ডন স্যান্ডারসন এর লিখা “লিজিয়ন” নভেলার প্রথম বই হলো এই লিজিয়ন । বুদ্ধিদীপ্ত সাইন্টিফিক প্লট , সাইকোলজিক্যাল টার্ম , এবং অসাধারণ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার উপর লিখিত এটি । গুডরিডসে এর এভারেজ রেটিং ৪.১৪ । বইটির কাহিনীও এগিয়েছে ক্রবর্ধমানভাবে। ল্যাটিন অরিজিনের শব্দ “লিজিয়ন” এর আক্ষরিক অর্থ হলো সৈন্যবাহিনী । যা বইয়ের সাথে বেশ ভালোভাবেই সাদৃশ্যপূর্ণ। আর সর্বশেষে ব্র্যান্ডন স্যান্ডারসন তার হাতের জাদুতে আরেকবার প্রমাণ করে দিয়েছেন যে তিনি বর্তমান সময়ে সাইন্স ফিকশন লেখকদের মধ্যে অন্যতম ।

 

অনুবাদ এবং প্রকাশনা নিয়ে কিছু মন্তব্য:

— মহিউল ইসলাম মিঠু ভাই এর অনুবাদ বেশ সাবলীল থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় বাংলিশের ব্যাবহার ছিলো খুবই বিরক্তিকর ।

— এই সাইজের একটি বইয়ে বানান ভুলের ছোটো খাটো মহোৎসব চলেছে বলেই মনে হয়েছিলো (যেমন: “বাথরোবটা”র জায়গায় “বাথরোটা” , “নোটটার” জায়গায় “নোটটা”) । এমন আরও অসংখ্য ভুল ছিলো , পড়ার মজা নষ্ট করে টুকে রাখতে ইচ্ছে করে নাই ।

— সবশেষে প্রোডাকশন এবং অনুবাদ মিলিয়ে ১০ এ ৬ ।

ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫

হ্যাপি রিডিং । ধন্যবাদ ।

 

পাঠকের অভিযোগের উত্তর:

রিভিউতে পাঠক অভিযোগ করেছেন, লেখার মধ্যে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার তাকে বেশ বিরক্ত করেছে। নিজের সাফাই হিসেবে বলতে চাই, বর্তমানে আমরা আমাদের কথায় প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি। কথোপকথন ও প্রকাশভঙ্গিটা যেন আমাদের বর্তমান সময়টার ছাপ থাকে, এবং কোনোভাবেই কাঠখোট্টা বা পোশাকী মনে না হয় এইজন্য কখনও কখনও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। বানান ভুল সম্পর্কে বলতে চাই। এতও বেশি ভুল কি আসলে ছিল? প্রকাশনের প্রতিটি পর্যায়ে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। বানানের প্রতি খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটুকু নিশ্চিত করতেই পারি। তারপরেও নির্ভুল করা তো সম্ভব নয়। যতটুকু রয়ে গেছে তা সম্পূর্ণই অনিচ্ছাকৃত।

 

বইটির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন: লিজিয়ন (বই পরিচিতি)

Author: Moheul I Mithu

মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। তার পাঠকপ্রিয় অনুবাদ গুলোর মধ্যে রয়েছে: দি হবিট, দি লর্ড অফ দ্য রিংস, পার্সি জ্যাকসন, হার্ড চয়েসেজ, দি আইস ড্রাগন, লিজিয়ন, প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে, দি আইভরি চাইল্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বিশ্বখ্যাত ২০টির বেশি বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল। (লিখেছেন: লে: কর্নেল রাশেদুজ্জামান)

Share This Post On

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link
Powered by Social Snap